নিজস্ব প্রতিবেদক: হঠাৎ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউটার্ন নিয়েছে। আজ দু দিনের সফরে আসছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপ সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার। আফরিন আক্তারের এই সফরকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে কোন তোলপাড় নেই, উত্তেজনা নেই। বিএনপি অন্যান্য সময় এ ধরনের উচ্চপদস্থ মার্কিন কূটনীতিকদের সফরে যেমন উচ্ছ্বসিত থাকত, এবার তাদেরকে তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সফর নিয়ে সরকারের মহলেই নানা রকম ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের পর থেকেই সরকারের সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক করতে চাইছে'। সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার বার্তা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাইছে। আর এই ঘনিষ্ঠতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ এতই তীব্র যে, তারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোকেও এড়িয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র বক্তৃতা, বিবৃতির মাধ্যমে তারা ড. ইউনূসের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। ইউনুসের ব্যাপারে অন্য পদক্ষেপ গ্রহণেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনাগ্রহ। নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম দিকে কিছু কথাবার্তা বললেও এখন নির্বাচন বিষয়টিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। বরং বাংলাদেশের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন এবং অন্যান্য ইস্যুগুলোকে পাশ কাটিয়ে সম্পর্কের উন্নয়নের বার্তাই এখন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রধান।
কেন এটি হচ্ছে? বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখন বিপরীত অবস্থানে প্রধান কারণ কি'? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, নতুন সরকার যেহেতু দায়িত্ব গ্রহণ করে ফেলেছে এবং নতুন সরকারের পিছনে ভারতের প্রত্যক্ষ সমর্থন রয়েছে,পাশাপাশি এমন কোনো বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি নেই, যারা জনপ্রিয়তার মাধ্যমে বা বিপুল জনসমর্থনে সরকারকে হটাতে পারে। কাজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে যে, বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখাটাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।অন্যদিকে সরকারও নির্বাচনের পর মনে করছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৈরিতা না রেখে ব্যবসা বাণিজ্যিক সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়াটাই হবে সবচেয়ে সঠিক পদ্ধতি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদারতার পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে, এই কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে;
১. বাণিজ্যিক স্বার্থ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে কতগুলো সুনির্দিষ্ট বাণিজ্যিক এজেন্ডা রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে বোয়িং বিমান বিক্রি করা, গভীর সমুদ্র বন্দরে তেল-গ্যাসের অনুমতি আদায় এবং বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যান্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক গুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী। আর এ কারণেই তারা দেখছে যে সরকার হটানোর পরিকল্পনার চেয়ে সরকারের সাথে সম্পর্ক রাখাটাই উত্তম। আর তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্য রকম মনোভাব নিয়েছে।'
২. ভারতের ভূমিকা: যেহেতু ভারত বর্তমান সরকারকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছে, আর এই কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, এই অঞ্চলে ভারতের বাইরে গিয়ে কোন কিছু করা সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদে কোন ইতিবাচক সুফল দেবে না। আর তাই তারা ভারতের বিরুদ্ধে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যাপারে কোন নীতি বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চাইছে না।
৩. পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা: পাকিস্তানে সাম্প্রতিক সময় যে অভিজ্ঞতা হয়েছে সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় আঘাত। তারা দেখেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি কৌশল এই উপমহাদেশে আস্তে আস্তে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সেজন্য পাকিস্তানে তারা যে ঘটনা ঘটিয়েছে একই রকম পরিস্থিতি বাংলাদেশে সৃষ্টি হোক তা তারা চায় না। কারণ এতে উপমহাদেশের পুরো নিয়ন্ত্রণ হারাবে মার্কি যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের সঙ্গে তাদের একটা সম্পর্ক থাকুক এবং এই সম্পর্কের মাধ্যমে তারা তাদের বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থগুলোকে এগিয়ে নিক।'
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.