ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: প্রায় চার হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাচীন বাংলার রাজধানী পুন্ড্রনগর খ্যাত বগুড়ায় সাংবাদিকতার রয়েছে অসাধারণ এক সোনালি ঐতিহ্য। উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার, দ্রোহ-বিদ্রোহের শিল্পসমৃদ্ধ বাণিজ্যিক এই শহরটি জন্ম দিয়েছে কয়েক ডজন পত্রিকার। দশকের পর দশক ধরে হয়ে উঠেছে গুণী আর জাতীয়ভাবে আলোচিত সাহসী সাংবাদিকতার আঁতুড়ঘর।
তবে আশি-নব্বই দশক থেকে শুরু করে শূন্য দশক পর্যন্ত বগুড়ায় অনুসরণীয় ও দৃষ্টান্তমূলক সাংবাদিকতার চর্চা দেখা গেলেও পরবর্তী সময়ে হঠাৎ মোড় ঘুরে যায়। ঐতিহ্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গত দেড়/দুই দশকে বগুড়ায় বিকাশ ঘটেছে সংগঠনভিত্তিক ‘নিয়ন্ত্রণযোগ্য’ এক বিরূপ সাংবাদিকতার। সিনিয়র সাংবাদিকরা হয়ে উঠেছেন পদ-পদবিনির্ভর, রাজনীতিমুখী। ফলে পুরো কমিউনিটিতে বিভাজন রেখা যতই স্পষ্ট হয়েছে, ততই পরস্পর থেকে দূরে সরে গেছেন পেশাদার সাংবাদিকরা।
দেশীয় রাজনীতি যখন থেকে অসীম ক্ষমতা আর অর্থের উৎস হয়ে উঠেছে, তখন থেকেই তার শিকারে পরিণত হয়েছে গৌরবময় অথচ অনিশ্চয়তার পেশা সাংবাদিকতা। অর্থ-ক্ষমতার প্রলোভনে রাজনীতির হাতে রে*প হতে হতে এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা সেটাকে ‘উপভোগ্য’ হিসেবে নিয়েছেন। আগে যেখানে রাজনীতিকরা যেতেন সাংবাদিকদের দুয়ারে, এখন সাংবাদিকরাই লুটে পড়েন রাজনীতিকদের পায়ে।
জাতীয় সাংবাদিকতায় উপভোগের এই চর্চা লুফে নিয়েছেন বগুড়ার সাংবাদিকরাও। ফলে রাজনৈতিক ঘৃণাবাদ আর প্রতিহিংসা চর্চায় আক্রান্ত হয়ে দিন দিন বহুবিভাজিত হয়ে পড়েছেন তারা। সাংবাদিক সংগঠনগুলোতে বহুমত আর পথের চর্চা বাধার মুখে পড়ছে। কর্তৃত্ববাদ আর স্বৈরতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রাস করেছে সাংবাদিকদের। ফলে সময়ের প্রয়োজনে, ডিজিটাল সাংবাদিকতার সুযোগে জেলার সাংবাদিকতায় নতুনমুখের বহু তরুণের উপস্থিতি ঘটলেও তারা উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছেন।
আর তাতে পাঁচ/ছয় দশকের ঐক্যবদ্ধ সাহসী ও সৃজনশীল সাংবাদিকতার ‘বাতিঘর’ বগুড়া প্রেসক্লাব পরিণত হয় রাজনীতির গণমাধ্যম শাখায়। দলীয় আদর্শ আর সাংবাদিকতার নীতিবোধের দেয়াল ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। পেশাদার সাংবাদিকরা হয়ে পড়েন কোণঠাসা। বাড়তে থাকে রাজনীতির আদর্শমুখী অপেশাদার সাংবাদিকদের দাপট। এক পর্যায়ে মূলধারার প্রেসক্লাবের বিপরীতে আরেকটি বিকল্পধারার প্রেসক্লাব তৈরি হয়।
গত ৫ আগস্ট রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক একচেটিয়া পক্ষপাতিত্বের সাংবাদিকতার গালে পড়েছে বড় চপেটাঘাত। ফলে রাজনীতিমুখী চর্চার বদলে জনমুখী সাংবাদিকতার নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। পিছিয়ে নেই বগুড়ার সাধারণ মানুষও। তারা সাংবদিকতার হারানো গৌরব ফেরত চান। ফলে রাজনৈতিকভাবে রে*প হওয়ার উপভোগ্য অনুভূতি থেকে সরে আসার কোনো বিকল্প নেই সাংবাদিকদের।