
নিজস্ব প্রতিবেদক: আট হাজার কোটি টাকা বকেয়া, এ কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা চারটি জাহাজ থেকে খালাস হচ্ছে না প্রায় দুই লাখ ৩২ হাজার টন কয়লা। পায়রা কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি) এসব কয়লা আমদানি করেছে। ১৯ জুলাই থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত একে একে চারটি জাহাজ নোঙর করে বন্দর সীমায়। ১৮ দিন দাঁড়িয়ে আছে এমন জাহাজও আছে বন্দরে।
এদিকে পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় প্রতিদিন এ চারটি জাহাজ ক্ষতিপূরণ গুনছে ৬০ হাজার ডলার (৭৩ লাখ টাকা)। এভাবে চারটি জাহাজের অপেক্ষমাণ খরচই দাঁড়িয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ ডলার (সাড়ে ছয় কোটি টাকা)। জাহাজ মালিক ক্ষতিপূরণের এই বাড়তি টাকা আদায় করবে বাংলাদেশের কাছ থেকেই।
পটুয়াখালীর পায়রার বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। এককভাবে দেশের মোট কয়লা বিদ্যুতের ১০ শতাংশ উৎপাদন করে তারা। এ কোম্পানিতে কয়লা সরবরাহ করছে ইন্দোনেশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ক্ষতিপূরণের টাকা আদায় করবে বিসিপিসিএল থেকে। বিসিপিসিএল তা আদায় করবে পিডিবি থেকে। কয়লা খালাস আরও দেরি হলে ক্ষতিপূরণের টাকার অঙ্ক আরও বাড়বে। কারণ এ মাসে আরও প্রায় দেড় লাখ টন কয়লা নিয়ে তিনটি জাহাজের বন্দরে নোঙর করার কথা রয়েছে। সেসব জাহাজেরও যদি অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে কাঁচামাল সংকটে হুমকির মুখে পড়বে পুরো বিদ্যুৎ প্রকল্প।
বিসিপিসিএল বলছে, বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও তহবিল সংকটের কারণে পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না পিডিবি। অথচ জাহাজ এলে প্রতি মাসে গড়ে তাদের খরচ হয় এক হাজার কোটি টাকা। বড় একটি জাহাজ থেকে লাইটারের মাধ্যমে পণ্য খালাস করতেই গড়ে ১০ কোটি টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে তাদের। মাসের পর মাস এ খরচ আটকে থাকায় লাইটার মালিকও এখন জাহাজ সরবরাহ দিতে অপারগতা প্রকাশ করছে। শুধু লাইটার মালিকের কাছে বকেয়া প্রায় ৭২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে পাওনার পরিমাণ প্রায় আট হাজার কোটি টাকা।
জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজাউল করিম গতকাল বিকেলে সমকালকে বলেন, পায়রার জন্য বিসিপিসিএল যে কয়লা আমদানি করে তা পরিশোধ করি আমরা। অর্থ সংকটের কারণে বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও দেশি লাইটার মালিকদের পাওনা আমরা নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছি না। তবে জরুরি প্রয়োজন হলে তারা আমাদের চিঠি দেয়। তখন আমরা কিছু হলেও পরিশোধ করি। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে চারটি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস না হওয়ার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। বিসিপিসিএল থেকে কেউ আমাদের কিছু জানায়নি।
তবে দ্বিমত পোষণ করে বিসিপিসিএলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিজিএম পর্যায়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কী পরিমাণ কয়লা নিয়ে কখন কোন জাহাজ আসে, তা নিয়মিত জানানো হয় পিডিবিকে। এ খাতে আমাদের কোথায় কত খরচ হয় সেটাও তাদের অজানা নয়। এ ছাড়া পিডিবি চেয়ারম্যান আমাদের বোর্ডের পরিচালকও। তাহলে কেন চিঠি দিতে হবে পিডিবিকে? বকেয়া থাকার পরও পণ্য নিয়ে জাহাজ আসছে কেন– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ছয় মাসের বাকি চুক্তিতে পণ্য পাঠাচ্ছে। টাকা পরিশোধ করতে তারা বারবার তাগাদাও দিচ্ছে। আগের শিডিউল থাকায় এখন পণ্য চলে এসেছে। তবে বারবার তারা সতর্ক করছে আমাদের। যে কোনো সময় তারা সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে।
বিসিপিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স) মোয়াল্লেম হোসেন বলেন, আমদানি কয়লার টাকা সরকারের পক্ষে পরিশোধ করে পিডিবি। গত এপ্রিলেও আমরা তাদের চিঠি দিয়ে বকেয়া পরিশোধ করতে তাগাদা দিয়েছি। সর্বশেষ গত মাসে ৩০০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে পিডিবি। কিন্তু বিদেশি সরবরাহকারী, লাইটার মালিক, জাহাজ মালিকসহ বিভিন্ন পক্ষের কাছে আমাদের বকেয়া জমে গেছে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা। এ কারণে জাহাজ পণ্য নিয়ে আসার পরও তা এখন আর খালাস করছে না লাইটার জাহাজ।,
চট্টগ্রাম বন্দরের বার্থিং লিস্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এমভি কারমেনসিটা নামের বিদেশি জাহাজ ৫৭ হাজার ২৭০ টন কয়লা নিয়ে বন্দর সীমায় নোঙর করে ১৯ জুলাই। ১৮ দিন পার হলেও তারা খালাস কার্যক্রমে যেতে পারেনি। ২৪ জুলাই ৬০ হাজার টন কয়লা নিয়ে বন্দরে আসে এমভি বিগ গ্লোরি। তারা পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ১৩ দিন। গত শনিবার ৫৫ হাজার ১০০ টন কয়লা নিয়ে এমভি ক্লারা বন্দরে আসে। গত মঙ্গলবার এমভি থিয়োডরি ভেনিয়ামিসে কয়লা আসে ৬০ হাজার টন।
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন জানান, কয়লা নিয়ে আসা জাহাজগুলো স্বাভাবিক জাহাজের চেয়ে একটু বড়। এদের দৈনন্দিন খরচও বেশি।,