সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: বউ, মিছিলে যাচ্ছি, আমার জন্য দোয়া করো”—এই আবেগঘন কথাই ছিল যুবদল নেতা সোহানুর রহমান খান রঞ্জুর শেষ বিদায়। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট স্বৈরাচারবিরোধী এক দফা আন্দোলনে মিছিলের সামনের সারিতে থেকে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।
সিরাজগঞ্জ শহরের মাসুমপুর দক্ষিণপাড়া মহল্লার বাসিন্দা রঞ্জু ছিলেন পৌর যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক। ৪ আগস্ট সকালে মিছিলে অংশ নিতে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে স্ত্রী মৌসুমী খাতুনকে বলেন, “আজ গোলাগুলি হবে না, সবাই যাচ্ছি।” বিদায় মুহূর্তে স্ত্রীর বারণ উপেক্ষা করে বলেন, “মানুষের হায়াত-মউতের কথা বলা যায় না। যাচ্ছি, হয়তো ফিরে নাও আসতে পারি।”
মিছিলে অংশ নেওয়ার কিছুক্ষণ পর শেষবারের মতো ফোনে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন রঞ্জু। জানান, তিনি ভালো আছেন এবং পুলিশ পাশে রয়েছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে রঞ্জুর গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্ত্রী মৌসুমী খাতুন বলেন, “ডান চোখে গুলি করা হয়, গুলিটি মাথার পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। পরে জানতে পারি, গুলির পর রঞ্জুকে নির্মমভাবে মারধরও করা হয়েছে।”
৮ বছর সংসার জীবনের পর রঞ্জু-মৌসুমী দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় একমাত্র কন্যাসন্তান সুমাইয়া খান রোজা। এখন তার বয়স দুই বছর সাত মাস। মেয়েটি এখনো বাবার অপেক্ষায় থাকে। খেতে বসে বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে বলে, “বাবা এসো, খাবে না?”
মৌসুমী বলেন, “রোজার জন্মের পর থেকে রঞ্জু মেয়েকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না। আজ মেয়েটি শুধু বাবার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে আছে। বাবার কথা বলে ঘুমোয়, বাবার আশায় পথ চেয়ে থাকে।”
রঞ্জু ছিলেন একজন সৎ ও মানবিক ব্যক্তি। তিনি ঢাকায় একটি ডেন্টাল ক্লিনিক পরিচালনার পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ নিউমার্কেটে ‘খান ডেন্টাল’ নামে একটি চেম্বার চালু করেন। এলাকার গরিব-দুঃখীদের সহযোগিতা করতেন সাধ্য অনুযায়ী।
৪ আগস্টের আন্দোলনে সিরাজগঞ্জ শহরের এস এস রোড এলাকায় মিছিল নিয়ে গেলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ময়নাতদন্ত শেষে ৬ আগস্ট সকাল ১০টায় কান্দাপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
বিএনপির মাসুমপুর ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি ইবনে জায়েদ হাসু বলেন, “আমি তাকে সামনের দিকে যেতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু সে যায় এবং গুলিতে প্রাণ হারায়। রঞ্জু একজন সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন।”
ঘটনার পর নিহতের স্ত্রী মৌসুমী খাতুনকে সহায়তা হিসেবে ‘জুলাই ফাউন্ডেশন’ থেকে ৫ লাখ টাকা ও ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, জামায়াত থেকে ২ লাখ এবং বিএনপি থেকে ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি একটি চাকরি চান মেয়ের ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই প্রণয় কুমার জানান, এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরী, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামীম তালুকদার লাবু, সাবেক পিপি-জিপি, ইউপি চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, “রঞ্জু ছিলেন গণতন্ত্র রক্ষার অগ্রসৈনিক। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমরা এ ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করছি।”
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.