
অনলাইন ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ফোনে আড়িপাতার ঘটনায় তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কমিটি নজরদারির সরঞ্জাম কোথা থেকে কত দামে কেনা হয়েছিল, কীভাবে ব্যবহার হয়েছে—সব খতিয়ে দেখবে। প্রয়োজনে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও নেওয়া হবে।
প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, আড়িপাতা মানবাধিকার ও ব্যক্তিনিরাপত্তার গুরুতর লঙ্ঘন। অনেক আগেই তদন্ত শুরু করা উচিত ছিল। কারা কত টাকা খরচে সরঞ্জাম কিনেছে, সেই ভেন্ডর কারা ছিল, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) বিলুপ্ত করার দাবিও জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি-বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই তদন্তে আওয়ামী সরকারের সময়কার ফ্যাসিস্ট আচরণের নমুনা স্পষ্ট হবে।
তথ্য অনুযায়ী, নজরদারির কাজে দুটি সংস্থা সক্রিয় ছিল—এনটিএমসি ও ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমিউনিকেশন (ডিওটি)। এক বছরে এনটিএমসি প্রায় দেড় লাখ ফোনকল রেকর্ড করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সরকারের সমালোচকদের ফোনকল রেকর্ড করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস করা হতো।
এ কাজে এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে দায়ী করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগও রয়েছে। ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন ঘিরে আড়িপাতার সরঞ্জাম কেনা আরও বেড়ে যায়।
সংশ্লিষ্টদের হিসেবে, ২০১৬ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে শুধু এনটিএমসির আড়িপাতা ও নজরদারিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫২ মিলিয়ন ডলার (৬৩১ কোটি টাকা)। তবে সঠিক অঙ্ক নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। কেউ বলছেন এসব সরঞ্জাম কেনা হয়েছে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারে, কেউ বলছেন ২০০ মিলিয়ন ডলারে। এর বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ইসরায়েল থেকেও আনা হয়েছে বলে অভিযোগ।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের আমলে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। সংবিধানে প্রদত্ত বাকস্বাধীনতা ও গোপনীয়তার অধিকার খর্ব হয়েছে। তদন্ত কমিটি পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখবে এবং প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।