প্রশাসনে উদ্বেগ-দুশ্চিন্তা: নির্বাচন, নিরাপত্তা ও পোস্টিং ঘিরে অনিশ্চয়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সামগ্রিক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, নির্বাচনকালীন প্রশাসনিক দায়িত্ব, পছন্দসই পোস্টিং না পাওয়া এবং ‘দলীয় দোসর’ তকমা দেওয়ার প্রবণতা—এসব নিয়ে চরম উদ্বেগ আর অস্বস্তিতে দিন কাটাচ্ছেন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ একাধিক দপ্তরের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠ প্রশাসন থেকে সচিবালয় পর্যন্ত সবখানেই এখন এক ধরনের দ্বিধা ও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও হচ্ছে ঘেরাও, মানববন্ধন বা কর্মবিরতি। এতে প্রশাসনিক কার্যক্রম বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, দুর্বল হয়ে পড়ছে ‘চেইন অব কমান্ড’।

একজন সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এসিল্যান্ড, ইউএনও বা ডিসিদের অনেকে এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। কারণ, মাঠপর্যায়ে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলেও পরবর্তীতে যদি মন্ত্রণালয়ের সাপোর্ট না থাকে, তাহলে জবাবদিহির মুখে পড়তে হচ্ছে।”

সরকারবিরোধী একটি সংগঠন ‘জুলাই ঐক্য’ সম্প্রতি ৪৪ জন সচিব ও ৯৫ জন ম্যাজিস্ট্রেটকে ‘পতিত আওয়ামী দোসর’ হিসেবে চিহ্নিত করে বাধ্যতামূলক অবসরের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটি দাবি পূরণে ৩১ মে’র মধ্যে আল্টিমেটাম দিয়ে ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। এতে প্রশাসনের অভ্যন্তরে ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এছাড়া তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’ দায়েরের অভিযোগ তুলে তৎকালীন দুদক সচিব মোখলেস উর রহমানসহ চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা আবেদন প্রশাসনের ভেতরে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে। অনেকেই মনে করেন, এই কর্মকর্তার একক সিদ্ধান্ত ও সমন্বয়হীনতা প্রশাসনের জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে। ফলে মামলা আবেদনে একাংশে স্বস্তি থাকলেও, এতে সামগ্রিকভাবে প্রশাসনের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ এ কে এম আবদুল আওয়াল বলেন, “যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা ও প্রণোদনার প্রয়োজন। ঢালাওভাবে ‘দলীয় দোসর’ ট্যাগ না দিয়ে বরং সৎ কর্মকর্তাদের উৎসাহিত করতে হবে।”

এদিকে গত নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী অনেক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর ও ওএসডি করা হয়। ফলে আগামী নির্বাচন ঘিরেও দুশ্চিন্তা বাড়ছে। অনেক মাঠ কর্মকর্তা আগেভাগেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির পরিকল্পনা করছেন।

সব মিলিয়ে প্রশাসনের অভ্যন্তরে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা ও আস্থাহীনতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন দরকার দৃঢ় নেতৃত্ব, স্বচ্ছতা এবং নীতিনির্ধারকদের বিচক্ষণ পদক্ষেপ।

 

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

বাংলাদেশের জন্য দুঃসংবাদ, শান্তি রক্ষা মিশনের এক-চতুর্থাংশ ছাঁটাই করছে জাতিসংঘ

অনলাইন ডেস্ক: জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী ৯টি শান্তি রক্ষা মিশনে আগামী কয়েক মাসে শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ অর্থের ঘাটতি। পাশাপাশি

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ, সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত

ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: বাংলাদেশের চার সমুদ্র বন্দর–চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। মঙ্গলবার আবহাওয়াবিদ মো. ওমর

বেলকুচি প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দের সাথে ইউএনও’র মতবিনিময়

জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরিন জাহানের সাথে বেলকুচি প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সকালে

ভোটাধিকার প্রয়োগেই প্রতিষ্ঠিত হবে রাজনৈতিক অধিকার: তারেক রহমান

নওগাঁ প্রতিনিধি: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ হলো ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার গঠন করা। জনগণের ভোটে বিএনপি সরকার গঠন

হাসিনার মতো ভুল করবেন না, ড. ইউনূসকে সতর্কবার্তা হেফাজতের

ডেস্ক রিপোর্ট: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেছেন, শেখ হাসিনার মতো ভুল করবেন না। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে কুরআন-সুন্নাহবিরোধী

ঈদের দাওয়াতে শ্বশুরবাড়ি না যাওয়ায় জামাইকে মারধর

ঠিকানা ডেস্ক: জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ঈদের দাওয়াতে শ্বশুরবাড়িতে না যাওয়ায় জামাইকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। এ সময় বাধা দিতে গেলে মারধরের শিকার হয়েছেন ভুক্তভোগীর বোনজামাই ও মা। বুধবার