
নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে যাচ্ছেন। সেখানে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক বিষয়ে বড় ধরনের চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে। ৯ জুলাই চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং এই সফরে চীনের সঙ্গে ৭০০ কোটি ডলার সমপরিমাণ বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক চুক্তি হতে পারে। এর মধ্যে বাণিজ্য সহায়তা পাওয়া যেতে পারে পাঁচশ কোটি ডলারের, বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে দুইশ কোটি ডলারের।
গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠিত ভারত সফরের উপর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে, ভারত এবং চীনের সঙ্গে সমান্তরাল সম্পর্ক বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মৌলনীতিরই অংশ। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতির মূল বিষয় ছিল সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়। আর তিনি সেই নীতি অনুসরণ করে চলেছেন। তিনি এটাও বলেন যে, ভারতের সঙ্গে চীনের সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক এটি ওই দুই দেশের বিষয়, এটি বাংলাদেশের বিষয় নয়। কাজেই বাংলাদেশ চীন এবং ভারতের সঙ্গে সমান্তরালভাবে স্বাভাবিক সম্পর্ক রেখে চলবে।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এটিও বলেছেন যে, ভারত বাংলাদেশের বিপদের বন্ধু আর চীন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। সবকিছু মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভারসাম্যের কূটনীতি স্পষ্ট। তিনি ভারত এবং চীন উভয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চান এবং সেই নীতি অনুসরণ করেই চলেছেন এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের সমাধানের জন্য চীনের কোন বিকল্প নেই বলেও বাংলাদেশ মনে করছে। এই কারণেই চীনের সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের দিকে তাকিয়ে আছে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দিয়েছে। ২১ জুন দুই দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর অত্যন্ত সফল হয়েছে বলে ভারতের গণমাধ্যমই স্বীকার করেছে এবং সেই সফরের পর ভারতের রাজনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে পশ্চিমবঙ্গকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানির চুক্তি বা গঙ্গার পানি চুক্তি করার সিদ্ধান্ত পশ্চিমবঙ্গ মেনে নেবে না। এ ব্যাপারে আবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে পাল্টা বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে একটা টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর ভারতের মধ্যে প্রতিক্রিয়া কী সৃষ্টি করবে, তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে আলোকে আলাপ-আলোচনা রয়েছে’।
প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময় চীনের বিষয় নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে বলে জানা যায়নি। যদিও কোন কোন ভারতীয় গণমাধ্যমের ধারণা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব জানার চেষ্টা করেছেন। তবে এর কোন প্রভাব বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে পড়েছে বলে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে না।’
অন্যদিকে চীনের উপর ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক নির্ভরতায় যুক্তরাষ্ট্র এই সফরের দিকে তাকিয়ে থাকবে, এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কারণ এই অঞ্চলে এখন চীনের একাধিপত্য প্রায় প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং নেপালের মতো দেশগুলো চীনের সঙ্গে অনেক ঘনিষ্ঠ হয়েছে এবং সেখানে মার্কিন প্রভাব বলয় প্রায় নিঃশেষিত। এই বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক বিষয়ের বাইরে রাজনৈতিক কোন মেরুকরণ হয় কি না সেটি দেখার অপেক্ষায় আছে কূটনৈতিক মহল।’