পোষ মেনেছে বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণি সজারু

জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: ভালোবাসার মানবিক অনুভূতি ও আবেগকেদ্রীক অভিজ্ঞতা এবং উদারতা, সহানুভূতি, স্রেহ এবং বিপরীতের ভালোর জন্য নিঃস্বার্থ-উদ্বেগ প্রকাশে যমন প্রস্ফূটিত হয়। তেমনই বিশেষ কোন মানুষ বা প্রাণির জন্য স্রেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশও ঘটে। মানুষ ও প্রাণির এমনই এক ভালোভাসার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সন্ধানপুর ইউনিয়নের কুশারিয়া গ্রামের বাসিন্দা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক লিটন মিয়া। লিটন মিয়ার অকৃত্তিম ভালোবাসায় সারা দিয়ে কুড়িয়ে পাওয়া বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণি সজারু পোষ মেনেছে। কুড়িয়ে পওয়া বন্য সজারুটির তাঁর ও এলাকার লোকজনেরও দারুণ সখ্যতা গড়ে ওঠেছে। প্রাণিটি দিনরাত লোকালয়ে ইচ্ছেমতো ঘুরে বাড়ির এদিক-সেদিক দৌঁড়ে বেড়াচ্ছে। প্রায় ১১ মাস আগে রমজানের পঞ্চম রাতে ঘাটাইল-সাগরদদিঘী স্থানিয় সড়কে কুড়িয়ে পেয়ে কুশারিয়ায় নিজের বাড়িতে আনার পর থেকে সজারুর ছানাটিকে পরম যত্নে লালন-পালন করেছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক লিটন। ভালোবাসা পেয়ে বর্তমানে প্রাণিটি অবিশ্বাস্য পোষ মেনে পরিবারের সদস্যর মতো বসবাস করছে।

ঘাটাইলের সন্ধানপুর ইউনিয়নের কুশারিয়া গ্রামে লিটনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির এপার-ওপারে দৈঁড়ে বেড়াচ্ছে সজারুর ছানা। কেউ চলার পথে বাধা দিলে পুরা শরীরের কাঁটাগুলো মেলে ধরছে। আদর গায়ে হাত বুলিয়ে দিলে আনন্দ পাচ্ছে। প্রতিদিন দুপুর ও বিকালে গর্ত থেকে বের হয়ে বাড়ির আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রাণিটি দেখতে উৎসুক জনতা লিটনের বাড়িতে ভিড় করছে। কুড়িয়ে পাওয়া বন্য সজারু ছানাটির নাম রেখেছেন ‘পাগলা’।

ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক লিটন মিয়া বলেন, ‘পাগলা’ বলে ডাক দিলে সজারুটি খাবারের জন্য ছুটে আসে। পেছন পেছন যেতে বললে সে পোষা অন্য প্রাণির মতা সাথে সাথে চলতে থাকে। পোষ মানা সজারু ‘পাগলা’ সাধারণত কলা, আলু, ফুলকপি, বাধাকপি, পাউরুটি, ভাত, দুধ, বিস্কুট ইত্যাদি খেতে বেশি পছন্দ করে।

লিটন মিয়া জানান, প্রায় ১১ মাস আগে রমজানের পঞ্চম রাতে ঘাটাইল-সাগরদিঘী সড়কের পাশে কুশারিয়া এলাকায় একটা কলার বাগানে ভেজা পড়ে থাকা অবস্থায় সম্ভবত দুই-চারদিন বয়সের সজারুর ছানাটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরিবারের সদস্যরা সবাই মিলে পরিচর্যার মাধ্যমে অসুস্থ সজারু ছানাটিকে পরম যত্নে সুস্থ করে তোলা হয়। এরপর থেকে সজারু ছানাটি পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে আনন্দে তাদের সঙ্গে বসবাস করছে। ঘরের ভেতর খেড় দিয়ে থাকা ও ঘুমানোর জন্য জায়গা তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সজারু ছানাটি সেখানে না ঘুমিয়ে ঘরের বাইরে একটা জায়গায় মাটির নিচে নিজেই সুরঙ্গ তৈরি করে সুন্দরভাবে বসবাস করছে।

সজারু ছানার প্রেমিক লিটন মিয়া জানান, একেবারে অল্প বয়স থেকে সজারু ছানাটি তার সংস্পর্শ থাকার সুযোগে সেও যেমন পোষ মেনেছে- ঠিক তেমনই ওটার প্রতিও এতোদিন একটা মায়া জন্ম নিয়েছে। প্রতিদিন দুপুরে সজারু ছানাটি গর্ত থেকে বের হয় তার হাতে খাবার খেয়ে গর্তে চলে যায়। আবার বিকালে বের হয়ে বাড়ির ঘরে এবং আশপাশের দোকানপাটেও নির্দ্বিধায় ঘুড়ে বেড়ায়। গভীর রাত পর্যন্ত সজারু ছানাটি আশেপাশে লোকালয়ে খেলাধুলা ও ছোটাছুটি করে খাবার খায়। সবার কাছে ছানাটি একটা আদরের পোষ্য প্রাণি হিসেবে কোন সমস্যা ছাড়াই বসবাস করছে।

ওই গ্রামের সাগর আহম্মেদ জানান, বন্যপ্রাণি সজারু ছানাটি পোষ মানার বিষয়টি আশ্চর্যজনক। এ প্রাণি তো লোকালয়ে মানুষের কাছে পোষ মানার কথা নয়। এগুলো সাধারণত পাহাড়ে গর্তে লুকিয়ে থাকে। লিটনের পরিবার প্রাণিটি প্রাকৃতিক উপায়ে পোষ মানার বিষয়টি তাকে চরম মুগ্ধ করেছে।

বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদশে সজারুর সংখ্যা এক সময়ে বেশ ছিল, তবে বর্তমান অবস্থা বিপন্ন। সজারু বাদামি, ছাই কিংবা সাদা বা মিশ্র রঙের হয়ে থাকে। শরীর ১৪ থেকে ২৮ সেণ্টিমিটার পর্যন্ত কাঁটা থাকে এবং ওজন ১০ থেকে ১৮ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী সজারু একটি সংরক্ষিত প্রজাতি এবং এর শিকার বা হত্যা আইনগত দণ্ডণীয় অপরাধ।

টাঙ্গাইল জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সজারু একদিকে হিংস্র ও অন্যদিক ভীত একটি প্রাণি। মানুষ বা বনের অন্য প্রাণিদের ভীষন ভয় পায়। অত্যন্ত ছোট অবস্থায় পেয়ে আদর-যত্ন পাওয়ায় ওটা পোষ মেনে থাকতে পারে। তবে ওটা পোষ মানার কোনো প্রাণি নয়- অটোরিকশা চালকের ক্ষেত্রে অনেকটা না মেনে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।

টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ডক্টর আবু নাসের মাহসিন হোসেন সাংবাদিকদের জানান, সজারু একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণি। বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী সজারু একটি সংরক্ষিত প্রজাতি এবং এর শিকার বা হত্যা আইনগত দণ্ডণীয় অপরাধ। তিনি অটোরিকশা চালকের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে সজারুটিকে এনে বনে অবমুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ওটা তিনি কোনোভাবেই লালন-পালন বা পোষা প্রাণির মতো নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারনে না।

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

আমলাদের ভুল সিদ্ধান্তে সরকার অস্বস্তিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক: একের পর এক চাপের মুখে পড়েছে সরকার। আর এই সমস্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে মূলত আমলাতন্ত্রের ভুল অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তের কারণে। জনবিচ্ছিন্ন আমলারা

নওগাঁয় মেয়াদপূর্তির পরও মিলছে না বীমার টাকা, ভোগান্তীতে গ্রাহক

নিজস্ব প্রতিবেদক: নওগাঁয় বীমার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরও বীমা গ্রহিতাদের টাকা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে ‘প্রগেসিভ লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’ নামে একটি বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের

জিয়া মঞ্চ সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার নবগঠিত কমিটির পরিচিতি ও আলোচলা সভা অনুষ্ঠিত 

জুয়েল রানা: সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় জিয়া মঞ্চ সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার নবগঠিত কমিটির পরিচিতি সভা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১১ই জানুয়ারী শনিবার বেলা ১১ টার দিকে

পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে হামলার ঘটনার পর দুই প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা পৌঁছেছে চরমে। এ হামলার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাধার শঙ্কা

কাবা শরীফের ইমাম উদ্বোধন করবেন টাঙ্গাইলের মসজিদ

 টাঙ্গাইলের গোপালপুরে যমুনার শাখা ঝিনাই নদীর তীরে ২০১ গম্বুজের মসজিদ নির্মিত হয়েছে। শিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির নির্মাণ কাজ ২০১৩

নিজের মাথায় গুলি করেন এএসপি পলাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার র‍্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে কর্মরত স্কোয়াড কমান্ডার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পলাশ সাহা অফিস কক্ষে নিজের ব্যবহৃত পিস্তল দিয়ে