সেলিম রেজা সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর ইউনিয়নের চর জগন্নাথপুর গ্রাম বিলীন হয়েছে গত তিন বছরে। ওই সময়ে নিশ্চিন্তপুর, কাজলগাও ও ডিক্রীদোরতা গ্রামে ভাঙনের কবলে পড়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও বসতবাড়ি অবশিষ্ট থাকলেও এখন সেগুলোও বিলীনের পথে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ তিন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোড স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রতিদিনই মানুষ গৃহহীন হচ্ছে। এতে পৈতৃক ভিটে-মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অসহায় মানুষগুলো। নীরবে নদীভাঙন দেখা ছাড়া যেন কোনো উপায় নেই তাদের।,
যমুনার গর্ভে ভিটে-বাড়ি হারানো চর জগন্নাথপুর গ্রামের তোজ্জামেল হক বলেন, এ গ্রামে ১ হাজার ৩০০ ভোটার ছিল। কিন্তু গ্রামের আর কোনো চিহ্ন নেই। সাক্ষী হিসেবে কয়েকটি গাছ ও সামান্য একটু ভূমি থাকলেও নেই কোনো বসতি। যমুনার তীব্র স্রোতে এখন সেখানে যাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর ভিটেমাটি হারিয়ে কয়েকশো পরিবার গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে আশপাশের বিভিন্ন স্থানে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিতে এ ভাঙন হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
নিশ্চিন্তপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের ও খয়ের আলী বলেন, এ গ্রামের ৫০ ভাগ গত তিন বছরে নদীতে চলে গেছে। গত কয়েকদিনে আরও ২৫ ভাগ বিলীন হয়ে গেছে। সম্প্রতি আমাদের বাড়ি নদীতে চলে যাওয়ায় নদীর পূর্ব পাড়ে কোনোমতে বসবাস করছি।
ডিক্রীদোরতা গ্রামের জুড়ান ও কোরবান আলী বলেন, নদীতে মাছ মাইরা সংসার চালাই। এখন পানি বাড়ছে, কিন্তু মাছ পাওয়া যায় না। বাড়ি ঘর সরিয়ে নিতেও টাকা লাগে। বাড়িতেতো কোনো টাকা নাই। কই যামু, সেই চিন্তায় আছি।,
নিশ্চিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল কবির বলেন, এ ইউনিয়নে সর্বমোট ১৪টি গ্রাম রয়েছে। তারমধ্যে সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে চর জগন্নাথপুর গ্রাম। আরও তিন গ্রাম নিশ্চিন্তপুর, কাজলগাও ও ডিক্রীদোরতা গ্রামের ৩০ ভাগ অবশিষ্ট থাকলেও সেগুলোও এখন বিলীনের পথে। ডিক্রীদোরতা গ্রামের অবশিষ্ট অংশে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিক ছাড়াও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যমুনার ১০০ থেকে ৩০০ মিটারের মধ্যেই এসব প্রতিষ্ঠান। পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এ তিনটি গ্রাম মানচিত্র থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যাবে।,
স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় বলেন, ভাঙন এলাকায় দুদিন আগে গিয়েছিলাম। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।,
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন,ওই তিন গ্রামে ভাঙনরোধে দু’এক দিনের মধ্যেই জিও ব্যাগ ফেলা হবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.