
নিজস্ব প্রতিবেদক: ফেনীর সোনাগাজীতে এক প্রবাসী পরিবার পুলিশের পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পরিবারটি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চেয়েও লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ থেকে রক্ষা পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন।
শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ২টার দিকে সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভোয়াগ গ্রামের রবীন্দ্র কুমার করের বাড়ির চন্দন কুমার করের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ও প্রতিবেশীদের অভিযোগ, জরুরি সেবা ৯৯৯-এ সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করার পরেও পুলিশ ঘটনাস্থলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পৌঁছাতে পারেনি। ডাকাতদল বাড়ির ভেতরে অবস্থান করার পরেও পুলিশ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, ছয়জন ডাকাত ঘরে ঢুকে স্বর্ণালংকার ও নগদ ৩৫-৪০ হাজার টাকাসহ মূল্যবান মালামাল নিয়ে যায়। এ সময় তারা প্রবাস থেকে ছুটিতে আসা সুমন কুমার কর, তার মা রুমা কর ও স্ত্রী স্মৃতি করকে মারধর করেন। এর আগে দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানালে ডাকাতদল ঘরের সামনে থাকা খড়ের গাদায় ও গোয়াল ঘরে আগুন দেন।
ভুক্তভোগী সুমন কুমার কর বলেন, ডাকাতদল প্রথমে পুলিশ পরিচয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলে। একপর্যায়ে আমাদের ঘরে আওয়ামী লীগের লোকজন আছে বলে দরজা খুলতে জোরাজোরি করতে থাকে। তাৎক্ষণিক আমি পাশের বাড়ির প্রতিবেশী রাহাতকে ফোন করে ডাকাতের বিষয়টি জানালে তিনি ৯৯৯-এ ফোন দেন।
তিনি বলেন, ডাকাতরা আমার সঙ্গে ২০ মিনিটের বেশি সময় তর্কবিতর্ক করেন। আমাদের ঘরে কোনো মানুষ নেই, সকালে আসেন বলার পর তারা বাইরে থেকে বলেন- সকাল-সন্ধ্যা, দিনরাত পুলিশের সময় সীমানা নেই, যখন তখন যেকোনো ঘরে ঢুকতে পারে। একপর্যায়ে তারা খড়ের গাদায় ও গোয়াল ঘরে আগুন দেয়। এরপর আমাদের ঘরে গান পাউডার দিয়ে আগুন দেবে বলার পর দরজা খুলতে বাধ্য হয়েছি।
৯৯৯-এ ফোন করার ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রতিবেশী রাহাত বলেন, রাত ২টা ১৯ মিনিটে তাদের বাড়িতে ডাকাত এসেছে জানিয়ে সাহায্য চান। তখন ৯৯৯-এ ফোন দিলে সেখান থেকে আমাকে সোনাগাজী থানা পুলিশের সঙ্গে সংযোগ করে দেয়। ঘটনাস্থলের ঠিকানা দিয়ে থানার এসআই নিদুল চন্দ্র কপালীর হোয়াটসঅ্যাপে লাইভ লোকেশন শেয়ার করি। পুলিশ নিজেও তার লাইভ লোকেশন হোয়াটসঅ্যাপে দিয়ে ঘটনাস্থলে আসছেন বলে জানান।’
তিনি আরও বলেন, ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক মতিগঞ্জে এলেও ওখানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। তাদের বারবার মতিগঞ্জের ভোয়াগ রাস্তা দিয়ে আসতে বললেও আসেননি। মতিগঞ্জ থেকে কদমতলা এরপর সৈয়দপুর চলে যান। সেখানেও পুলিশ সদস্যরা দাঁড়িয়ে থাকেন। তখন আবার ফোন দিলে রাত ৩টা ১০মিনিটে তারা ঘটনাস্থলের কাছাকাছি এসে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে পেছনের দিকে চলে যান। তখনো সুমনদের বাড়িতে ডাকাতদল অবস্থান করছিল। কয়েক মিনিট অপেক্ষার পর এসআইসহ পুলিশ সদস্যরা কিছুক্ষণ বাঁশি বাজায়। দশ মিনিট অপেক্ষার পর ডাকাতদল চলে গেলে পুলিশসহ আমরা ওই বাড়িতে ঢুকি।
অন্যদিকে স্থানীয় একটি সূত্রে জানা যায়, চন্দন কুমার করের ভাই মিলন কুমার কর মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাদের বাড়িতে স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা জুয়েল আত্মগোপনে ছিলেন। পরে জুয়েলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অনেকের সন্দেহ, মিলন, জুয়েল ও ইউপি সদস্য মিস্টার ওই ঘরে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই সূত্র ধরে অগ্নিসংযোগ ও ডাকাতির ঘটনা ঘটাতে পারে বলে দাবি স্থানীয়দের।
সোনাগাজী থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক নিদুল চন্দ্র কপালী বলেন, ৯৯৯-এ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তবে প্রথম কখন তথ্য পেয়েছি তা সঠিক মনে নেই। আমি ৩টা ১০মিনিটের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন দেখতে পেয়েছি। ডাকাতদল তাদের জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকাপয়সা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছেন বলে ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বায়েজীদ আকন্দ বলেন, ৯৯৯-এ খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। এ ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। ইতোমধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সেনাবাহিনীসহ আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।’