নিজস্ব প্রতিবেদক: গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ে। এরপর এক বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। এর মধ্যে পুনর্গঠনের কাজ এগোলেও এখনও ছয়টি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে বাহিনীকে। এসব হলো—অভ্যন্তরীণ সংস্কার, আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন, লুট হওয়া অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার, জুলাই অভ্যুত্থান মামলার তদন্ত ও আসামি গ্রেপ্তার, মামলার চার্জশিট দাখিল এবং জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজন।
সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা মনে করেন, চ্যালেঞ্জ অতিক্রমে পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের তদারকি বাড়ানো জরুরি। তিনি বলেন, “সংস্কার, মামলা তদন্ত ও বেহাত অস্ত্র উদ্ধারে মাঠপর্যায়ের পুলিশকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।”
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এএইচএম শাহাদাত হোসাইন জানান, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একাধিক কমিটি কাজ করছে এবং আইজিপি নিয়মিত অগ্রগতি তদারকি করছেন।
অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ে এখনও মানুষের উদ্বেগ কাটেনি। খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, মব ভায়োলেন্স বেড়েছে। ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ও চলমান ‘চিরুনি অভিযান’-এর পরও পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত উন্নতি হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব এড়িয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। মব সহিংসতা ও লুট হওয়া অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করাও জরুরি।”
গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনায় ১ হাজার ৭৩০টি মামলা হয়েছে, এর মধ্যে ৭৩১টি হত্যা মামলা। মাত্র ২৯টির চার্জশিট দাখিল হয়েছে, বাকি তদন্তাধীন। অনেক আসামি সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও পুলিশ কর্মকর্তা। দুজন সাবেক আইজিপিসহ ৬৫ জন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হলেও অনেকে এখনও পলাতক।
ক্ষমতার পালাবদলকালে ৪৬০ থানা ও ১১৪টি ফাঁড়িতে হামলায় ৫ হাজার ৭৫৩টি অস্ত্র ও প্রায় সাড়ে ৬ লাখ গুলি লুট হয়। এর মধ্যে এখনও উদ্ধার হয়নি ১ হাজার ৩৬৩টি অস্ত্র ও আড়াই লাখের বেশি গুলি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দেশের নিরাপত্তার বড় হুমকি।
অভ্যন্তরীণ সংস্কারের জন্য পুলিশ সংস্কার কমিশনের দেওয়া সুপারিশ বাস্তবায়নও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে দেড় লাখ পুলিশ সদস্য মোতায়েনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সদর দপ্তর। এজন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে বডিওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম কেনার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মতে, এসব চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারলে পুলিশ জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.