
নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি চালু হলে কেউ একক কর্তৃত্ব কায়েম করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতিতে ভোট ডাকাতির সুযোগ নেই এবং জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটে। পদ্ধতিগত পরিবর্তন ছাড়া দেশে গণতন্ত্র ও ন্যায়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব নয়।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই,) রাতে রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াতের সাংগঠনিক থানা ও বিভাগীয় দায়িত্বশীল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালিত হওয়ার ফলে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও মানুষ তার অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে হচ্ছে। কারণ একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীনদের ফ্যাসিবাদী করে তোলে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, চব্বিশের ছাত্র জনতা একক কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। ফ্যাসিবাদের হাত থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে দুই সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে। ৫০ হাজারের অধিক আহত-পঙ্গু করেছে। ছাত্র-জনতা যেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে সেই বৈষম্য আবার সৃষ্টি হলে রাষ্ট্রকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। বৈষম্য সৃষ্টির উৎপত্তি স্থল হচ্ছে একক কর্তৃত্ব।
জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে বৈষম্যহীন কল্যাণ রাষ্ট্র জাতিকে উপহার দেবে দাবি করে তিনি বলেন, যেই রাষ্ট্রের স্বপ্ন ছিল আমাদের শহীদদের। জুলাইয়ে আত্মদানকারীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে এবং গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে প্রবাসীরা। অথচ প্রবাসীদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি জাতিকে দিয়েছে। তবে কোনো কোনো দলের কর্মকাণ্ডে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হলে একদিকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতার প্রমাণ হবে, অপরদিকে জনপ্রতিনিধিত্ববিহীন স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার দুর্ভোগ লাঘব হবে। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে জনপ্রতিনিধি না থাকায় স্থানীয় সরকারের সকল ক্ষমতা ডিসি-ইউএনওদের হাতে। ফলে জনগণকে আমলাদের কাছে গিয়ে দাঁড়াতে হয়। জনপ্রতিনিধি না থাকার সুযোগে স্থানীয় সরকারের সব স্তরে চলছে দুর্নীতি মহোৎসব। তাই জামায়াতে ইসলামী; রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, গণহত্যার বিচারের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, এই দাবি জামায়াতে ইসলামীর একার নয়। এই দাবি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের ও সর্বস্তরের জনগণের।,
জাতীয় ঐকমত্য তৈরির পিছনে কঠিন ষড়যন্ত্র চলছে দাবি করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, রাষ্ট্রের সংস্কারের জন্য এবং জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেই উদ্যোগে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হয়ে সমর্থন জানালেও একটি দল বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। ফলে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টিতে বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি নিজের ও দলীয় স্বার্থ পরিহার করে জাতীয় স্বার্থে ত্যাগ স্বীকার করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবারকে উপযুক্ত সম্মানি দিতে হবে, আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করত হবে। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো ফ্যাসিবাদ মুক্ত করার আন্দোলন করে সফল না হলেও ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করেছে। অথচ এখন কেউ কেউ লম্বা লম্বা কথা বলে। যারা আন্দোলনের কথা শুনলেই ফোন বন্ধ করে রাখতো।
তিনি আরও বলেন, জামায়াত জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় কারণ দলীয় সরকারের অধীনে কখনো কোন নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়নি। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনও নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে।,
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামি ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, জুলাইয়ের প্রেরণা ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে। নতুন করে যেই ঘাটতি বা ব্যত্যয় ঘটছে তা অচিরেই কেটে যাবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
তিনি বলেন, শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধ রয়েছে। সেই দায়বদ্ধ থেকে নতুন বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নিজেদের স্বার্থ পরিহার করতে হবে।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।,
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আতিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম প্রমুখ।