নিজস্ব প্রতিবেদক: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা নদীর তীরে নির্মিত ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে (সিওডি) যেতে দফায় দফায় বিলম্ব হচ্ছে। পর্যাপ্ত কয়লা সরবরাহ ও সঞ্চালন লাইনের জটিলতার কারণে উৎপাদন শুরু না হওয়ায় কেন্দ্রটি সচল রাখতেই প্রতি মাসে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪৬ কোটি টাকার বেশি।
এই আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি উল্লেখ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি) ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রটির পরিচালন সংস্থা আরপিসিএল-নরিনকো পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেড (আরএনপিএল)। চিঠিতে বলা হয়, উৎপাদন বিলম্বের কারণে কেন্দ্রের অতিরিক্ত ব্যয় প্রকল্পের মোট নির্মাণ ব্যয়ে যুক্ত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ট্যারিফে প্রভাব ফেলবে।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে চীনের এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে প্রকল্পটি শুরু হয়। ১৪ বছর মেয়াদি ঋণচুক্তির চার বছরের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়েছে গত ২৭ সেপ্টেম্বর। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে ঋণের প্রথম কিস্তি পরিশোধ করতে হবে।
বিপিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বণিক জানান, আরএনপিএলের প্রথম ইউনিটের উৎপাদনের জন্য পিজিসিবি থেকে অনুমোদন পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় ইউনিট সঞ্চালন লাইনের ওপর নির্ভর করছে। কয়লা সরবরাহ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কয়লার বিষয়টি আরএনপিএলের দায়িত্বে। তারা কয়লার ব্যবস্থা করতে পারলে বিপিডিবি বিদ্যুৎ ক্রয় করবে।’
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট গত ১ মার্চ পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যায় এবং সীমিত পরিসরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপিত থাকলেও চালু হয়নি। বর্তমানে গ্রিডে সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সক্ষমতার প্রায় ২৫ শতাংশ।
কেন্দ্রটি পূর্ণ সক্ষমতায় চালাতে দৈনিক অন্তত ১২ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন। বর্তমানে যে পরিমাণ কয়লা মজুদ রয়েছে, তা দিয়ে সর্বোচ্চ ১৭ দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। নতুন কয়লা সরবরাহকারী নিয়োগের দরপত্র আদালতে বিচারাধীন থাকায় আমদানির প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে।
চীনের এক্সিম ব্যাংক ইতিমধ্যে আরএনপিএলকে ৫৩ মিলিয়ন ডলার সুদ পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে। প্রকল্প বিলম্বের কারণে আগামী পাঁচ মাসে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হতে পারে বলে আরএনপিএলের এক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে নির্মিত কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হয় গত ১৯ জানুয়ারি, আর দ্বিতীয় ইউনিট ৯ এপ্রিল। বর্তমানে বিপিডিবি প্রথম ইউনিট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত পরিসরে বিদ্যুৎ গ্রহণ করছে।
প্রকল্পের পরিচালক ও আরপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. নাজমুস সায়াদাত সম্প্রতি বিপিডিবিকে পাঠানো এক চিঠিতে আরএনপিএলের আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তবে এ বিষয়ে তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.