
ডেস্ক রিপোর্ট: সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান “অপারেশন বুনিয়ানুম মারসুস” নামে একটি বড় পরিসরের সাইবার পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছে । পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সাইবার ইউনিট পরিচালিত এই অভিযানে ভারতের সরকারি ই-মেইল, ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) অবকাঠামো, বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্র, বিমানবন্দর, রেল যোগাযোগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে ব্যাপক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানায়, ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য পর্যায়ের বহু ওয়েবসাইট ও সংযোগব্যবস্থা হ্যাক করে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এতে বিপর্যস্ত হয়েছে জাতীয় যোগাযোগব্যবস্থা। হ্যাকারেরা ভারতের নজরদারি ব্যবস্থা পর্যন্ত হ্যাক করে, এমনকি অনেক সরকারি সার্ভার নষ্ট করে ফেলে। এই আক্রমণের ফলে ভারতের বিদ্যুৎ বিভাগে প্রায় ৮০ শতাংশ ভোক্তা কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
তারা আরও জানান, বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ ও জম্মু-কাশ্মীর। মহারাষ্ট্রে ৪৬০০টির বেশি পাওয়ার ফিডার, উত্তরপ্রদেশে ৩৬০০ এবং কাশ্মীর অঞ্চলে ৬০০-এরও বেশি ফিডার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চলে লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারে ব্যবহৃত এআই প্রযুক্তিনির্ভর দুটি সার্ভার সম্পূর্ণ অচল করে দেওয়া হয়। কর্নাটকে ২৩৫টির বেশি সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র অকার্যকর করে দেওয়া হয়।
সূত্রগুলো আরও জানান, সাইবার হামলায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর (IAF), হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড, বিএসএফ, ভারতীয় রেলওয়ে, এবং ইউআইডিএআইসহ ৯০টিরও বেশি সরকারি ও করপোরেট ওয়েবসাইটের তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়। মুম্বাই, দিল্লি ও কলকাতা বিমানবন্দরের সার্ভার হ্যাক হয় এবং বিমান বাহিনীর উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম কমান্ডের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
এই সাইবার হামলার সময় ভারতীয় রেলওয়ের সার্ভারেও সমস্যা দেখা দেয়, ফলে বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচলে বড় ধরনের বিলম্ব হয়।’
১০ মে চালানো এই ‘অপারেশন বুনিয়ানুম মারসুস’ ছিল ভারতের সামরিক হামলার জবাবে পাকিস্তানের ‘মারকা-এ-হক’ সামরিক প্রতিক্রিয়ার অংশ। পাকিস্তানের দাবি, ভারতের ৬ ও ৭ মে রাতের আক্রমণে নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ অসংখ্য নিরীহ মানুষ নিহত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান পাল্টা সশস্ত্র প্রতিক্রিয়ায় নামে এবং আল-ফাতাহ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে ভারতের একাধিক সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়।
এ সময় পাকিস্তানের বিমান বাহিনী ভারতীয় বিমান বাহিনীর পাঁচটি জেট এবং একটি ইসরায়েলি হেরন ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করে বলে দাবি করেছে। ভূপাতিত বিমানগুলোর মধ্যে রয়েছে তিনটি রাফায়েল, একটি মিগ-২৯, একটি সুখোই এবং একটি ড্রোন। এগুলো ভূপাতিত হয় ভাটিন্ডা, জম্মু, আখনুর, শ্রীনগর ও আওন্তিপুর এলাকায়।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে ১০ মে উভয় দেশের মধ্যে জরুরি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। পরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও একযোগে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
যদিও উভয় পক্ষ কূটনৈতিকভাবে শান্তির বার্তা দিলেও সীমান্তে (লাইন অব কন্ট্রোল) বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহেলগামে এক হামলা নিয়ে, যেখানে ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে, যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করে এবং ভারতের বিরুদ্ধে ‘চুক্তি লঙ্ঘনের’ অভিযোগ তোলে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে এ ধরনের সংঘর্ষ শুধু অঞ্চল নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই হুমকি হয়ে উঠতে পারে।’