
অনলাইন ডেস্ক: পাকিস্তানে মৌসুমী বৃষ্টিপাতে প্রাণহানি বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু পাঞ্জাব প্রদেশেই ভারী বর্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬৩ জন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৩০০ জন। এ নিয়ে গত জুনের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮০ জনে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (NDMA) বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, চলতি বর্ষা মৌসুমে একদিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানির রেকর্ড এটি। বুধবার সকাল থেকে পাঞ্জাবজুড়ে টানা ভারী বর্ষণে দেখা দেয় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি।
পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরে প্রাণহানি হয়েছে ১৫ জনের, ফয়সালাবাদে ৯ জন এবং ওকারা, সাহিওয়াল ও পাকপত্তনেও প্রাণ গেছে আরও কয়েকজনের। বেশিরভাগ মৃত্যু ঘটেছে দুর্বল নির্মাণ কাঠামোর ঘরবাড়ির ছাদ ধসে।
প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, চলমান মৌসুমে শুধু পাঞ্জাবেই নিহত হয়েছেন ১০৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৩৯৩ জন। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২০টির বেশি বসতবাড়ি এবং মারা গেছে ছয়টি গবাদিপশু।
দেশব্যাপী টানা বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি। কিছু এলাকায় ধসে পড়েছে ভবন, ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। বাড়ছে পানির উচ্চতা, সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
উত্তরাঞ্চলীয় মংলা শহরের ঝেলম নদীতে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কায় জারি করা হয়েছে বন্যার উচ্চ সতর্কতা। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, নদীর আশপাশের ছোট ছোট সব নদীতেও পানি দ্রুত বাড়তে পারে, ফলে পার্শ্ববর্তী জনপদে নতুন করে বন্যার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় বছরে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বৃষ্টিপাতই ঘটে এই মৌসুমে—ভারতে জুনের শুরুতে এবং পাকিস্তানে জুনের শেষদিকে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও লাখো কৃষকের জীবিকা এই বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল হলেও অতিবর্ষণে প্রাণহানিসহ নানাবিধ দুর্যোগ দেখা দেয়।
আবহাওয়া বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়া ক্রমেই অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মৌসুমী বৃষ্টিপাতের ধরনেও পরিবর্তন এসেছে, যার প্রভাব মারাত্মক।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ভয়াবহ বন্যায় পাকিস্তানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে যায় এবং প্রাণ হারান অন্তত ১ হাজার ৭০০ জন। বহু অঞ্চল এখনও সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। চলতি বছরের মে মাসেও প্রবল ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে নিহত হন অন্তত ৩২ জন।
সূত্র: রয়টার্স, এএফপি।