অনলাইন ডেস্ক: গাজায় ভয়াবহ আগ্রাসনের আড়ালে অধিকৃত পশ্চিম তীরে চলমান দমন-পীড়নে গত দুই বছরে সহস্রাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে যে সহিংস অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই বাড়ছে প্রাণহানি।
সর্বশেষ গত ১ জুলাই হেবরনের কফর মালিক গ্রামে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন সামের বাসাম আল-জাগারনেহ। একই দিনে বসতি সন্ত্রাসীদের হাতে তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হন।
দমননীতির চরিত্র
স্থানীয় অধিকারকর্মী ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং অবৈধ ইহুদি বসতির সশস্ত্র ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠীগুলো প্রতিনিয়ত পশ্চিম তীরের গ্রাম ও শহরগুলোতে হানা দিচ্ছে। রাতভর চলে তল্লাশি, ঘরবাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নির্বিচার গুলিবর্ষণ। এসব ঘটনায় নিরীহ ফিলিস্তিনিরা ঘরছাড়া হচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রে প্রাণ হারাচ্ছেন।
একই সঙ্গে সেনাবাহিনী নানা অজুহাতে শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালিয়ে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। অনেক সময় হামলায় আহতদের চিকিৎসা নিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, নিহতদের দাফনেও বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দখল প্রক্রিয়ার অংশ
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, এসব হামলা মূলত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে আরও বেশি জমি দখলের প্রক্রিয়ার অংশ।
‘পিস নাও’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালেই ইসরায়েল গত দুই দশকের মধ্যে সর্বাধিক জমি দখল করেছে। নেতৃত্বে রয়েছেন চরম-ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ, যিনি ২০২৩ সালে ‘সেটেলমেন্ট প্রশাসন’ নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন। এই প্রশাসনের মাধ্যমে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি আইন প্রয়োগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বসতি সম্প্রসারণ চালানো হচ্ছে।
কোথায় চলছে হামলা?
জেনিন, নাবলুস, তুলকারেম, নূর শামস ও ফারা—এই এলাকাগুলোর শরণার্থী শিবিরসহ পশ্চিম তীরজুড়ে চলছে অভিযান। গবেষণা সংস্থা ‘ফরেনসিক আর্কিটেকচার’ জানিয়েছে, গাজায় ব্যবহৃত কৌশলেই এসব শিবির অবরুদ্ধ করে ধ্বংস করা হচ্ছে। হাসপাতাল ও জনবসতিও ইসরায়েলি হামলার শিকার হচ্ছে।
বসতি সন্ত্রাসীদের উগ্রতা
‘টেক ফর প্যালেস্টাইন’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বসতি সন্ত্রাসীরা অন্তত ১ হাজার ৮০০টি হামলা চালিয়েছে। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধেই হামলার সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪১৪টি। হামলার লক্ষ্যবস্তু মূলত 'এরিয়া সি' অঞ্চল, যা পশ্চিম তীরের ৬০ শতাংশ এলাকা এবং সম্পূর্ণ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে।
সহিংসতা থামছে না
জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, হেবরনের মাসাফার ইয়াত্তার এলাকায় অন্তত ১২টি ফিলিস্তিনি গ্রাম উচ্ছেদের চেষ্টায় রয়েছে ইসরায়েল, যেখানে ‘সেনা প্রশিক্ষণ এলাকা’ ঘোষণা দিয়ে বাস্তুচ্যুতি বৈধ করার কৌশল নেওয়া হয়েছে।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দমননীতি এখন যেন নিয়মিত চিত্র। প্রতিরোধ করতে চাইলেও ইসরায়েলি বাহিনীর পাল্টা সহিংসতার আশঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.