
অনলাইন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসাত মহকুমায় ঘটে চলেছে এক অদ্ভুত সামাজিক প্রবণতা—শত শত গৃহবধূ ঘর ছাড়ছেন নিখোঁজের খাতায় নাম লেখিয়ে। গত পাঁচ মাসে নিখোঁজ হয়েছেন অন্তত ৫৩৬ জন নারী, যাদের প্রায় ৯০ শতাংশই বিবাহিত গৃহবধূ। স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজে এই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিস্তর আলোচনা ও উদ্বেগ।
প্রাথমিকভাবে এসব নিখোঁজ ঘটনাকে নিছক পারিবারিক ইস্যু হিসেবে দেখা হলেও, এখন তা হয়ে উঠেছে এক গভীর সামাজিক সংকেত। পুলিশের দাবি, নিখোঁজ নারীদের অনেকে প্রেমঘটিত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েই সংসার ত্যাগ করেছেন। অনেকে বাইক আরোহী প্রেমিকের হাত ধরে পাড়ি জমিয়েছেন অজানায়, কেউ কেউ আবার স্বামীর বন্ধু কিংবা পরিচিতদের সঙ্গে গড়ে তোলা সম্পর্কে জড়িয়ে ঘর ছেড়েছেন।
এ ক্ষেত্রে ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ—এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোই যোগাযোগের মূল মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কিছু নারী তাদের সন্তান রেখেই পরিবারকে না জানিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাচ্ছেন। উদ্ধার হওয়া অনেক নারী পুলিশকে সরাসরি বলছেন, ‘আমরা প্রাপ্তবয়স্ক, নিজেদের জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে পারি।’
এই জবাব সমাজে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে—এটা কি নিছক মোহ, নাকি দাম্পত্য জীবনের দীর্ঘদিনের অবসাদ ও সম্পর্কের সংকটের বহিঃপ্রকাশ?
সমাজতাত্ত্বিকদের ব্যাখ্যা, এটি নিছক কিছু ব্যক্তির সিদ্ধান্ত নয়, বরং এক বৃহৎ সামাজিক পরিবর্তনের দিকেই ইঙ্গিত দেয়। নিঃসঙ্গতা, অবদমন ও সম্পর্কের অবহেলা থেকে মুক্তি পেতে অনেক নারী মোবাইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুঁজছেন বিকল্প জীবন। সমাজে লুকিয়ে থাকা সম্পর্কজনিত অসন্তোষ, মানসিক চাপ ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা হয়তো এই প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করছে।
বারাসাত পুলিশ জেলার প্রতিটি থানাকে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। শুরু হয়েছে নজরদারিও। তবে লজ্জা বা সামাজিক মর্যাদা রক্ষার কারণেই অনেক স্বামী পুলিশের কাছে স্ত্রী নিখোঁজ হলেও পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ করছেন।
এই ঘটনা এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল, বিশেষ করে দেগঙ্গার একটি ফেসবুক পেজ থেকে শুরু হয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে হাজারো চ্যাট গ্রুপ ও পেজে।
সচেতনতা, মনো-সামাজিক সহায়তা এবং সম্পর্ক উন্নয়নমূলক উদ্যোগ ছাড়া এ প্রবণতা কীভাবে থামানো যাবে, তা নিয়েই এখন ভাবছে স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজ বিশেষজ্ঞরা।