পদ্মার পাড়ে আন্তর্জাতিক মানের কনটেইনার পোর্ট নির্মাণের উদ্যোগ
পানগাঁও অভিজ্ঞতা সামনে রেখেই ৭৫৬ কোটি টাকার প্রকল্প, বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা ও সরকারের প্রত্যাশা
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার কেরানীগঞ্জে ২০১৩ সালে স্থাপিত পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল (আইসিটি) প্রত্যাশা অনুযায়ী সফল হয়নি। এক লাখ একক কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা থাকলেও গত বছর হ্যান্ডলিং হয়েছে মাত্র ২,৮৭৫টি। অতিরিক্ত খরচ, দীর্ঘ সময় ও সীমিত সংযোগ—ব্যর্থতার পেছনে রয়েছে এমন একাধিক কারণ। এই বাস্তবতায় এবার মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়ায় নতুন একটি ‘আন্তর্জাতিক মানের’ কনটেইনার পোর্ট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৭৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৯.১৩ একর জমিতে নির্মিতব্য এ বন্দরে বছরে হ্যান্ডলিং হবে ২ লাখ ৪ হাজার একক কনটেইনার। থাকবে ২১৫ মিটার দীর্ঘ ও ৩৫ মিটার প্রস্থের জেটি, যেখানে একসঙ্গে দুটি বড় জাহাজ নোঙর করতে পারবে। স্ট্যাক ইয়ার্ডে একত্রে তিন হাজার কনটেইনার সংরক্ষণের সক্ষমতাও থাকবে। নির্মাণ শেষ হতে সময় লাগবে তিন বছর, আর প্রত্যাশিত বার্ষিক রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১৪৫ কোটি টাকা।
গত ২২ জুন শিমুলিয়া ঘাটে আয়োজিত এক সভায় নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “এটি শুধু সমুদ্রবন্দরের জন্য নয়, অভ্যন্তরীণ নৌপথেও ব্যবহৃত হবে। শিল্প-কারখানা, সড়ক ও রেলসংযোগ—সবকিছু বিবেচনায় এ এলাকায় একটি বন্দরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।”
তবে বন্দর কার্যকারিতা নিয়ে মতভেদ রয়েছে অবকাঠামো বিশেষজ্ঞদের। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামছুল হক প্রশ্ন তুলেছেন, “ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্ট থাকা সত্ত্বেও পানগাঁও বন্দর সফল হয়নি। মাওয়া-শিমুলিয়ার মতো অপেক্ষাকৃত অনুন্নত এলাকায় নতুন বন্দর কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।”
তিনি বলেন, “পানগাঁও প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার মূল কারণগুলোর পর্যালোচনা ছাড়া নতুন বিনিয়োগ যৌক্তিক নয়। বরং পানগাঁওকেই কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।”
উল্লেখ্য, পানগাঁও টার্মিনাল নির্মাণ শুরু হয় ২০০৫ সালে এবং শেষ হয় ২০১২ সালে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকায় কনটেইনার পরিবহন সহজ করতেই এটি স্থাপন করা হয়। কিন্তু অতিরিক্ত ট্যারিফ, দীর্ঘ খালাস সময় ও পরিবহন সমস্যায় এই টার্মিনাল এখনও পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার হয়নি।
নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা জানান, পানগাঁওয়ে ট্যারিফ কাঠামো পুনর্বিন্যাসসহ ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক অপারেটর যুক্ত করার বিষয়ে সরকার চিন্তাভাবনা করছে। কিছু প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে আগ্রহও দেখিয়েছে।
অতীতের অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করে শিমুলিয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নে সঠিক পরিকল্পনা, কার্যকর সংযোগ এবং বেসরকারি অংশীদারিত্বের সুযোগ থাকলে নতুন বন্দর দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে—এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—এই প্রকল্প সফল হবে, নাকি পানগাঁওয়ের মতোই ঝুলে যাবে?
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.