
নিজস্ব প্রতিবেদক: পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীর বালু উত্তোলন ও নৌ চ্যানেলের খাজনা আদায়কে কেন্দ্র করে ইজারাদারদের মধ্যে সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করেছে। কয়েক মাস ধরে চলমান এই বিরোধ এখন সশস্ত্র সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণে রূপ নিয়েছে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা।
গত ৬ অক্টোবর দুপুরে ঈশ্বরদীর সাঁড়া ক্যানেলপাড়ায় বন্দুকধারীদের অতর্কিত হামলায় গুলিবিদ্ধ হন নিজাম ও সজীব নামের দুই যুবক। স্থানীয়রা জানান, প্রতিপক্ষের নৌকাবহর থেকে নির্বিচারে গুলি ছোড়া হয়, যা টিনের বেড়া ভেদ করে কয়েকটি ঘরেও প্রবেশ করে। আহত দুজন বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন।
নদীপাড়ের লোকজনের ভাষায়, কুষ্টিয়ার সোহেল খন্দকার, নাটোরের লালপুরের কাকন আলী ও ঈশ্বরদীর এটি এন্টারপ্রাইজের মেহেদি হাসানের মধ্যে চলছে আধিপত্যের দ্বন্দ্ব। বালু মহাল ও নৌ চ্যানেলের টোল আদায়কে কেন্দ্র করে দুই জেলার ইজারাদারদের এই সংঘর্ষে পদ্মাপাড়ের কয়েকটি গ্রাম অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। প্রায়ই এলাকায় গুলির শব্দ শোনা যায়, যার ফলে স্থানীয়রা ভয়ে নদীতে নামতে বা ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশ নিতে পারছেন না।
সাঁড়া ঘাট এলাকার জেলে সুবল দাস বলেন, “নদীতে এখন নৌকা নিয়ে যাওয়া ভয়ানক ঝুঁকিপূর্ণ। গুলির শব্দে রাতদিন আতঙ্কে থাকি।”
গুলিবিদ্ধ সজীবের মা ফাহিমা খাতুন বলেন, “বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই গুলিবিদ্ধ হয়েছে আমার ছেলে। সন্ত্রাসীরা নৌকা থেকে গুলি চালায়।”
এ ঘটনার পর থেকে প্রশাসন একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করেছে। গত ১৭ জুলাই সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ যৌথ অভিযানে তিনটি পিস্তল, গুলি, নগদ ১২ লাখ টাকা ও দুটি মাথার খুলি উদ্ধার করে। তখন মাহফুজুর রহমান সোহাগ ও আশরাফুল ইসলাম বাপ্পি নামে দুজনকে আটক করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২৯ সেপ্টেম্বর ও ৪ অক্টোবর অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে আরও কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ।
এটি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মেহেদি হাসান অভিযোগ করেন, “ইজারার সীমানা অতিক্রম করে প্রতিপক্ষ দল টোল আদায় করছে। বাধা দিলে তারা সশস্ত্র হামলা চালায়।”
তবে অন্য ইজারাদারদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঈশ্বরদীর লক্ষ্মীকুন্ডা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম বলেন, “নদীতে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। কোনো ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ স ম আব্দুন নূর বলেন, “নদীতে দায়িত্ব নৌ পুলিশের হলেও, নদীপাড়ের নিরাপত্তায় থানা পুলিশও কাজ করছে।”
স্থানীয়দের মতে, দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ না নিলে পদ্মার তীরবর্তী এই সংঘাত আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।