
নিজস্ব প্রতিবেদক: স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। যখন যে দল ক্ষমতায় এসেছে সে দলের প্রভাবশালী ব্যক্তি বা রাজনীতিকরাই গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রণালয় পরিচালনা করে এসেছেন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। যখন যে দল ক্ষমতায় এসেছে সে দলের প্রভাবশালী ব্যক্তি বা রাজনীতিকরাই গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রণালয় পরিচালনা করে এসেছেন। নগর থেকে গ্রাম—সব ক্ষেত্রেই এ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়িত হয় ছোট-বড় নানা প্রকল্প। আর এসব প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের মতো গুরুতর অভিযোগ। মূলত রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন কাজ বাগিয়ে নেয়ারও অভিযোগ ওঠে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। একই পথে হাঁটছে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দায়িত্ব পাওয়া অন্তর্বর্তী সরকার। মন্ত্রণালয়টিতে পতিত আওয়ামী লীগ আমলে নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও অনৈতিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
২০০৯ থেকে ২০২৪—টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় ছিল শেখ হাসিনার সরকার। এর মধ্যে প্রথম দফায় অর্থাৎ ২০০৯ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন দলটির তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। এরপর ২০১৫ সালে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর দপ্তরটির দায়িত্ব পান দলটির তৎকালীন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও শেখ হাসিনার সাবেক বেয়াই খন্দকার মোশাররফ হোসেন। মন্ত্রণালয়টির সবশেষ মন্ত্রী ছিলেন তাজুল ইসলাম, যিনি বিগত সরকারপ্রধানের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান মন্ত্রী হিসেবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলান। কেবল আওয়ামী লীগ আমলেই নয়, সব রাজনৈতিক শাসনামলেই সরকারপ্রধানের ঘনিষ্ঠজনরা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়টির দায়িত্ব পালন করেছেন। বিএনপি আমলেও মন্ত্রণালয়টি পরিচালনা করেছেন দলের প্রভাবশালী নেতারা। ২০০১ সালে দলটি ক্ষমতায় আসার পর সরকারের এ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব দেয়া হয় তৎকালীন মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুঁইয়াকে। এর আগে ১৯৯১-৯৬ পর্যন্ত মন্ত্রণালয়টির দায়িত্ব সামলেছেন বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আব্দুস সালাম তালুকদার।
এদিকে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ। তার মৃত্যুর পর দায়িত্ব দেয়া হয় শেখ হাসিনা সরকার পতন আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে, যিনি আগের মন্ত্রী তাজুল ইসলামের প্রকল্পগুলোই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার বিগত সরকারের বাজেট ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) নিয়ে চলছে। অথচ এগুলো নীতিগতভাবে সংশোধন, পরিমার্জন ও পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন ছিল। সেই সঙ্গে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া প্রকল্পগুলোকে বদলানোর কথাও বলছেন তারা। পাশাপাশি এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা কমানোর ওপরও জোর দেন বিশ্লেষকরা, যাতে উচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা কাজগুলো করা যায়।
এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের অতিমূল্যায়িত ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নিয়েই চলছে। মাঝপথে অনেক প্রকল্প থামানো মুশকিল, সেটি বুঝি কিন্তু এগুলো পুনর্বিন্যাস করা যেত। আর যতটুকু করা হয়েছে সেটিও কোনো স্বচ্ছ নীতিমালার ভিত্তিতে করেছে বলে মনে হয় না। বরাদ্দের মতো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও একইভাবে আগের মতোই বিকৃতি দেখা যাবে। ফলে যাদের জন্য করা তাদের কাছে সেভাবে এর সুফল পৌঁছবে না।’
আগের প্রকল্পগুলো প্রণয়নের সঙ্গে যারা জড়িত তারাই এখনো দায়িত্বে উল্লেখ করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘মূল সমস্যা হচ্ছে আমরা আগের কাঠামোর কাছেই জিম্মি হয়ে রইলাম। তাছাড়া এগুলো যারা করেছে তারাই এখনো দায়িত্বে। প্রশাসনিকভাবেই শুধু নয়, এসব প্রকল্পের সঙ্গে যারা আর্থিক ও পেশাগতভাবে যুক্ত ছিলেন ভেতরে ও বাইরে তারাই এখনো এর সঙ্গে রয়ে গেছেন। ফলে এর ব্যত্যয় হওয়ার কোনো সুযোগ আমি দেখছি না।’
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ স্থানীয় সরকার এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়ের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ বেশ পুরনো। বিশেষ করে এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোকে ঘিরে প্রায়ই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। গত বছরের আগস্টে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পতিত সরকারের লুটপাটের প্রকল্পগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে—এমনটাই প্রত্যাশা ছিল সবার। যদিও বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই বললেই চলে। পতিত সরকারের সময়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের নেয়া প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। আওয়ামী সরকারের সময়ে প্রণয়ন করা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে যেসব প্রকল্প ছিল বর্তমান সময়ের সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) এসব প্রকল্পের প্রায় সবই স্থান পেয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে বরাদ্দও বেড়েছে।
পরিকল্পনা বিভাগের তথ্যানুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১০২টি প্রকল্পের জন্য ১৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে জিওবি (সরকারি অর্থায়ন) ১৩ হাজার ৪৯২ কোটি ও প্রকল্প ঋণ বা অনুদান ৪ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১২-এ। প্রকল্পের সংখ্যা বাড়লেও এক্ষেত্রে মোট বরাদ্দের পরিমাণ কিছুটা কমে হয়েছে ১৬ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সংশোধিত এডিপিতে জিওবি ১৩ হাজার ৫৫২ কোটি ও প্রকল্প ঋণ বা অনুদান ৩ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা।
এডিপির তুলনায় আরএডিপিতে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরো ১০টি প্রকল্প। এগুলো হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়), বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের জেলাগুলোর পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলা, ভৈরব নদের তীর সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প, দিঘলিয়া, খুলনা; রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, মুন্সিগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, হোস্ট অ্যান্ড এফডিএমএন এনহ্যান্সমেন্ট অব লাইভস থ্রো ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (হেল্প), পিবিডিএফের কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রকল্প-দ্বিতীয় পর্যায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প অন্যতম। এর বাইরে এডিপিতে থাকা প্রায় সব প্রকল্পই আরএডিপিতে জায়গা পেয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দপ্রাপ্ত শীর্ষ পাঁচ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ সড়কে সেতু উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচি (প্রথম সংশোধিত) ৯৫৩ কোটি; আশ্রয়ণ-২ (পঞ্চম সংশোধিত) ৮৮৪ কোটি; রুরাল কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (প্রথম সংশোধিত) ৭২৫ কোটি; ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন শীর্ষক প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত) ৭০০ কোটি এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩ (প্রথম সংশোধিত) ৬৭৫ কোটি টাকা।
আরএডিপিতে এ খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩ (প্রথম সংশোধিত) ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। এডিপিতে এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬৭৫ কোটি টাকা। আরএডিপিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে গ্রামীণ সড়কে সেতু উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচি (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটি। এডিপিতেও এ প্রকল্পের জন্য একই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ ছিল। ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন শীর্ষক প্রকল্পের (প্রথম সংশোধিত) ক্ষেত্রে এডিপিতে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও আরএডিপিতে তা বাড়িয়ে ৮০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। রুরাল কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টে (প্রথম সংশোধিত) আরএডিপিতে ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যেখানে এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৭২৫ কোটি টাকা। এডিপিতে ৩৫০ কোটি টাকার বরাদ্দপ্রাপ্ত পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটি আরএডিপিতে ৬০০ কোটি টাকার বরাদ্দ পেয়েছে। আরএডিপিতে ময়মনসিংহ অঞ্চল পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত) ৪৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে, এডিপিতে এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৫০ কোটি।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘উত্তরাধিকার সূত্রে যে প্রকল্পগুলো সরকার পেয়েছে সেগুলো বদলাতে না পারলে তো যেমন আছে তেমন চলতে থাকবে। পদ্মা সেতু একটি রাজনৈতিক প্রকল্প হলেও এটি অর্থনীতিতে একটি সম্পদ যোগ করেছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতের প্রকল্পগুলোর একটি বড় দুর্নাম হচ্ছে যে এখানে যে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে সেটি আমাদের কোনো সম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে কাজে লাগেনি। এটি সরকারি অর্থ পুকুরে ফেলে দেয়ার বড় একটি খাত। এসব প্রকল্পের ক্ষেত্রে যেটি দেখা যায় যে এক্ষেত্রে অপচয়ের মাত্রা অনেক বেশি, প্রকল্প শুরু হলে শেষ হয় না, ঠিকাদার চক্রের প্রাধান্য বেশি থাকে, স্থানীয় রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবের মতো বিষয়গুলো কাজ করে।’
সরকার পরিবর্তন হলেও এসব প্রকল্প রয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব প্রকল্পে মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততা থাকে, ফলে এখানে আমলাতন্ত্রের স্বার্থ রয়েছে। সেই সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে কিছু স্বার্থান্বেষী গ্রুপও গড়ে ওঠে। তাই নতুন সরকার এসে যে খুব সহজে এগুলো পরিবর্তন করে ফেলতে পারবে তা নয়। অবশ্য এ খাতে ছোট ও স্বল্পমেয়াদের প্রকল্প বেশি হওয়ার কারণে এটি কমানোর সুযোগ ছিল। এজন্য জড়তা কাটিয়ে যদি উচ্চপর্যায় থেকে জোর তাগিদ আসে তাহলে পরিবর্তন সম্ভব। এখানে নেতৃত্বের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আমার পরামর্শ থাকবে এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যাটা কমানোর, যাতে মন্ত্রণালয়গুলো উচ্চ অগ্রাধিকার থাকা কাজগুলো করতে পারে।’
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গত মাসে নিজেই জানিয়েছিলেন, নাগরিকদের কাছ থেকে তার মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি ঘুস-দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছেন। দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল তার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধেও। দুদক সূত্রে জানা যায়, মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তদবির, টেন্ডার-বাণিজ্যসহ অনিয়মের মাধ্যমে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। পাশাপাশি তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্লক করা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সংশোধিত এডিপিতে আমাদের প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার বাজেট কমানো হয়েছে। যেসব প্রকল্প রাজনৈতিক বিবেচনায় নেয়া হয়েছিল, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। তবে বৈদেশিক সহায়তায় সেসব প্রকল্প রয়েছে, সেগুলো পরিবর্তন করতে গেলে ডিপিপি পরিবর্তন করতে দীর্ঘমেয়াদি সময়ের প্রয়োজন হয়। ২০১৭, ২০১৮ কিংবা ২০২০ সালে আমরা অনেকগুলো প্রকল্পে বৈদেশিক সহায়তার কমিটমেন্ট পেয়েছি। সময় চলে যাওয়ার কারণে বৈদেশিক ঋণ কিংবা সহায়তার যে বিষয়গুলো—দেখা যাচ্ছে ঋণের সুদ বাড়তে থাকে, তারপরে পেনাল্টির বিষয় আছে এখানে। তাই বৈদেশিক সহায়তার প্রকল্পে আমরা কোনো পরিবর্তন আনিনি, জিওবির প্রকল্পের যেগুলোয় রাজনৈতিক কম্পোনেন্ট রয়েছে সেগুলো পুনর্বিবেচনা করছি, ডিপিপি সংশোধন করছি। আমাদের প্রায় অর্ধেকের বেশি প্রকল্পে ডিপিপি সংশোধন হয়েছে এবং এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’
এদিকে উপদেষ্টা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় সংশোধিত এডিপিতে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ কমানোর দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে ১ হাজার ৭৭ কোটি টাকা কমেছে বলে পরিকল্পনা বিভাগ থেকে জানা যায়। আর এ খাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জন্য জিওবি থেকে দুটি প্রকল্পে ১ হাজার ১০৪ কোটি টাকার বরাদ্দ ছিল, যেটি আরএডিপিতে কমিয়ে ৩৭০ কোটি টাকা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আগের সরকারের নেয়া প্রকল্পগুলো সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার পাশাপাশি জিওবি থেকেও বরাদ্দ পেয়েছে।