নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে নেমেছে ব্যাপক তৎপরতা। বড় দলগুলোর পাশাপাশি ছোট ও নবগঠিত দলগুলোও এখন সক্রিয়। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্যমতে, দেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বর্তমানে ২০০ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫১টি। নতুন করে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে ১৪৪টি দল। আরও কিছু দল রয়েছে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার বাইরে—কারও রাজনৈতিক অবস্থান আঞ্চলিক, আবার কিছু দল নিষিদ্ধ ঘোষিত।
তবে ইতিহাস বলছে, এতসংখ্যক দলের অস্তিত্ব থাকলেও জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী এবং সংসদে প্রতিনিধিত্ব পাওয়া দলের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। গত ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৮১টি দল অংশ নেয় ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদে এবং সর্বনিম্ন ৮টি দল অংশ নেয় ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদে।
নিবন্ধন চালু হওয়ার পর দলগুলোর অংশগ্রহণ সীমিত হয়ে আসে। অনেক ছোট দল বড় দলের সঙ্গে জোটে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় মূলত নিবন্ধন বা রাজনৈতিক স্বীকৃতির জন্য। কেউ কেউ কেবল দলীয় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য এক-দুটি আসনে প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, আবার অনেকেই বড় দলের প্রার্থীর পক্ষে ভোটে নাম লেখায়।
স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালে। সেখানে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৯৩টি আসন পায়। এরপর দ্বিতীয় সংসদে বিএনপি ২০৭টি আসন নিয়ে জয়লাভ করে। তৃতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসন পায়। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদে বিএনপি ১৪০টি, আওয়ামী লীগ ৮৮টি, জাতীয় পার্টি ৩৫টি ও জামায়াত ১৮টি আসন অর্জন করে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো দলীয় নিবন্ধন চালু হয়। সেবার আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। তবে পরবর্তী তিনটি—দশম (২০১৪), একাদশ (২০১৮) ও দ্বাদশ (২০২৪)—সংসদ নির্বাচন একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত হয় বলে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা রয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় আওয়ামী লীগ ও তার শরিকরা। ২০১৮ সালের নির্বাচন রাতের ভোট কেলেঙ্কারির অভিযোগে প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে অংশ নেয় ২৮টি। বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমিত ছিল। এতে আওয়ামী লীগ ২২৪টি, জাতীয় পার্টি ১১টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি আসনে জয় পায়।
নিবন্ধন পদ্ধতি চালুর পর এখন পর্যন্ত ৫৫টি দল নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নিবন্ধন একবার বাতিল হলেও সম্প্রতি ফেরত পেয়েছে। অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। ফলে বর্তমানে দেশে ৫০টি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সক্রিয় রয়েছে।
সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে নতুনভাবে গঠিত ২৮টি দলসহ মোট ১৪৪টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দলীয় সংখ্যায় বাড়বাড়ন্ত থাকলেও নির্বাচনী বাস্তবতায় কার্যকর দল এবং সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক শক্তির সংখ্যা সীমিত। ফলে প্রয়োজন রাজনৈতিক সংস্কার, গণতান্ত্রিক পরিবেশ, এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা—যাতে বহুদলীয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা যায়।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.