নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে প্রশাসনে স্থিতিশীলতা থাকা জরুরি। কিন্তু এখন যেন উল্টো চিত্র। সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দুই সপ্তাহ ধরে সচিববিহীন, মাঠ প্রশাসনে বদলি ও পদায়নে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা, আর তদবিরের চাপে অন্তর্বর্তী সরকার নিজেই সংকটে পড়েছে। ফলে নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসন কার্যত দিশেহারা অবস্থায়।
সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষণামতে, জাতীয় নির্বাচনের আর প্রায় ১২০ দিন বাকি। অথচ প্রশাসনের মূল দপ্তর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কার্যত স্থবির। সচিবের পদ ২১ সেপ্টেম্বর থেকে শূন্য, অতিরিক্ত সচিব রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদোন্নতি প্রক্রিয়াও থমকে আছে।
এর মধ্যে আবার জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক, প্রত্যাহার, নতুন প্রজ্ঞাপন—সব মিলিয়ে প্রশাসনে অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। সচিবদের পদায়ন ও ওএসডি করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সর্বশেষ ৫ সেপ্টেম্বর ওএসডি থাকা কিছু উপসচিবকে এমন দপ্তরে পদায়ন দেওয়া হয়েছে, যেখানে আগে থেকেই শূন্যপদ নেই।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিঞা বলেন, “প্রশাসনে এখন কোনো শৃঙ্খলা নেই। স্থবিরতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা আগে দেখা যায়নি। নির্বাচনের আগে এই অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক।”
প্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যরা বলছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রশাসনের সব স্তরে পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করা জরুরি। কিন্তু দলীয় প্রভাব, পছন্দের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি এবং অগ্রহণযোগ্য ‘গোপন প্রতিবেদন’ পদ্ধতি প্রশাসনকে পক্ষপাতদুষ্ট করে তুলেছে।
একজন কর্মকর্তার ভাষায়, “চাকরির পর কর্মকর্তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে প্রতিবেশীর মন্তব্য নিয়ে গোপন প্রতিবেদন তৈরি হয়—এ এক অযৌক্তিক প্রথা। এতে যোগ্যরা বঞ্চিত হন, প্রভাবশালীরা সুবিধা নেন।”
জনপ্রশাসনে দলীয়করণের সূত্রপাত নব্বইয়ের দশকে ‘জনতার মঞ্চ’ পরবর্তী সময়ে। এরপর থেকে পদোন্নতি ও নিয়োগে রাজনৈতিক আনুগত্য প্রাধান্য পেয়েছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এ প্রবণতার উল্লেখও রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি বা বাছাইয়ের চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিজেই এখন গতিহীন। সম্প্রতি জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি পুনর্গঠন করে সরকার প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবকে বাদ দিয়েছে, যা নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করেছে বলে অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে।
অন্যদিকে, পদ ছাড়াই পদোন্নতির সংস্কৃতি চলছে অব্যাহতভাবে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, উপসচিব পদ রয়েছে প্রায় এক হাজার, কিন্তু কর্মকর্তা আছেন ১ হাজার ৫৯৬ জন। অতিরিক্ত সচিব পদেও কর্মকর্তার সংখ্যা নির্ধারিত পদের চেয়ে বেশি। এমনকি সচিব পদেও ১০ জন ওএসডি এবং ১২ জন চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা রয়েছেন।
প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা মনে করেন, রাজনৈতিক সুবিধাভোগীদের প্রভাব ও সিদ্ধান্তহীনতা না কাটলে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ প্রশাসন কার্যত সম্ভব হবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে এখনই দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.