নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় ও গণভোটের সময়সূচি নিয়ে টানা এক বছর আলোচনা করেও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের শেষ বৈঠকও শেষ হয়েছে কোনো সমাধান ছাড়াই। এতে করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও গভীর হয়েছে।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অনড় অবস্থানের মুখে কমিশন জানিয়েছে—বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও রাজনৈতিক দলের মতামত সমন্বয় করে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করা হবে। কমিশনের আশা, ১৫ থেকে ১৭ অক্টোবরের মধ্যে সনদে স্বাক্ষর সম্পন্ন হবে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে মতভেদ স্পষ্ট। বিএনপিসহ কয়েকটি দল জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের পক্ষে, অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ কিছু দল নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিতে অনড় রয়েছে। গণভোটের প্রশ্ন ও প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়েও সমঝোতা হয়নি। ছয়টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাব নিয়ে তৈরি জুলাই সনদের খসড়া চূড়ান্ত হলেও বাস্তবায়ন পদ্ধতি অনির্ধারিত রয়ে গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তুলেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে অস্থিরতা, এনসিপির প্রতীক সংকট, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং আন্তর্জাতিক মহলের বাড়তি তৎপরতা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সচিবের পদ শূন্য থাকা, মাঠ প্রশাসনে অস্থিরতা ও নির্বাচনের প্রস্তুতি না থাকাও উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনের মাত্র চার মাস বাকি থাকলেও মাঠ প্রশাসনে এখনো কোনো কার্যকর প্রস্তুতি শুরু হয়নি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ সম্প্রতি জানিয়েছে, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনই টেকসই গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। তাদের এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এর মাধ্যমে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক শক্তিকে পুনরায় সক্রিয় করার চেষ্টা চলছে।
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠীর উত্থান, হত্যাকাণ্ড ও অপহরণের ঘটনায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনাও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নির্বাচনের আগে দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)ও তাদের অবস্থান বারবার পরিবর্তন করছে। শুরুতে তারা নির্বাচনের দিন গণভোটে সম্মত থাকলেও এখন নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি দলের প্রতীক নিয়ে জটিলতাও নিরসন হয়নি, যা নির্বাচনি রাজনীতিতে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
এদিকে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘবদ্ধ অপরাধ, রাজনৈতিক সহিংসতা ও নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। এতে জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে এবং ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও প্রার্থীদের প্রচারণা কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সব মিলিয়ে প্রশাসনিক প্রস্তুতির ঘাটতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তা উদ্বেগ মিলিয়ে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা ক্রমেই বাড়ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন না হলে নির্ধারিত সময়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.