
অনলাইন ডেস্ক: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরে যাওয়ার একটিও কারণ নেই এবং তা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে বোঝাতে পেরেছেন বলে জানালেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। আজ সোমবার সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আলাপ-আলোচনা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে আমরা প্রায় কাছাকাছি আসতে সক্ষম হয়েছি। এখনো দ্বিতীয় পর্যায়ের আলাপ-আলোচনায় তারা আমাদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। মনে হয়েছে কিছু কিছু জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, বিশেষ করে সংবিধান সংক্রান্ত কিছু ইস্যুতে তারা একমত হওয়ার জন্য সব দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন।’ হয়তো আমরা জাতীয়ভাবে সব বিষয়ে একমত পোষণ করতে পারব না। এটাই হচ্ছে বিউটি অব দ্য ডেমোক্রেসি, কিন্তু আমরা আলাপ-আলোচনা করব। আমরা কোথাও কোথাও দ্বিমত পোষণ করব। কোথাও কোথাও হয়তো আমরা একমত হতে পারব। কোথাও আমরা একমত হওয়ার কাছাকাছি আসতে পারব। এইভাবেই একটা জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি হবে।’’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘সকল বিষয়ে যদি ঐক্যমত সৃষ্টি হয় সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে, তাহলে হবে সেটা একটা অনন্য অপূর্ব জিনিস। সেটা আমি এতটা বেশি আশা করতে পারব না। কারণ বিভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন রকমের বক্তব্য থাকবে, দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে, দৃষ্টিকোণ থাকবে। আমরা সেটাই গ্রহণ করব, যেটা এই জাতির জন্য বৃহত্তর স্বার্থ সংরক্ষণ করবে। আমরা সেটাই গ্রহণ করব যেটা জাতীয় ভিত্তিতে গৃহীত হলে এই জাতির মধ্যে একটা ঐক্য সৃষ্টি হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তাই প্রস্তাব করব যে প্রস্তাবগুলো গৃহীত হলে একটি সুন্দর শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে, এখানে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স প্রতিষ্ঠিত হবে, রাষ্ট্রের সব অঙ্গের মধ্যে একটি ভারসাম্য অবস্থা সৃষ্টি হবে। তার মধ্য দিয়ে একটা হারমোনিয়াস কো-অপারেশন হবে ইন বিটুইন অল অর্গানস অব স্টেট।’ আমরা শহিদদের রক্তের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী এ দেশের জনমানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা একটি গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য অবশ্যই সেসব বিষয়গুলোকে বিবেচনা করব, যেগুলো আমরা গ্রহণ করলে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় কাঠামো গঠন করতে পারব এবং এর মধ্য দিয়ে এই দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে পারব।’
এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা মনে করি ডিসেম্বরের ভেতরে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা খুবই সম্ভব এবং এর আগেই জরুরি ভিত্তিতে যেসব সংস্কার করা প্রয়োজন, বিশেষ করে নির্বাচনমুখী সেই সংস্কারগুলোকে চিহ্নিত করে আমরা ঐকমত্যের মাধ্যমে সেগুলো বাস্তবায়ন করব। এমন কোনো সংস্কার নাই যেগুলো এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।’’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে রিপোর্ট পেয়েছি আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে অনেকগুলো অর্ডিন্যান্স এবং অনেকগুলো সংশোধনী এসেছে বিভিন্ন সেক্টরে, যেগুলো অলরেডি বাস্তবায়ন হয়েছে। আরও অনেকগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় আছে। সেগুলো অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে করা সম্ভব, নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে করা সম্ভব, এমনকি কিছু কিছু সংস্কার অফিস আদেশের মাধ্যমে করা সম্ভব। সেগুলোর জন্য বিশেষ করে সংবিধান সংশোধনী ব্যতিরেকে অন্যান্য সব সংশোধনীর বিষয়ে একমত হবে সংস্কার প্রস্তাবে, সেগুলো অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বা অফিস আদেশের মাধ্যমে এক মাসের ভেতরে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সেটা আমরা বুঝিয়ে দিয়েছি।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘সুতরাং নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে যাওয়ার একটিও কারণ উল্লেখ করার মতো নেই। এই বিষয়টা আমরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি এবং আমরা আবারও অ্যাপ্রোচ করেছি। আজকের বৈঠকে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মধ্যে আমরা যেটা দেখলাম যে, প্রায় সবাই ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচনের জন্য তাদের প্রস্তাব রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন প্রধান উপদেষ্টা সেটা বিবেচনা করবেন বলে আমরা আশা করি এবং আমরা মনে করি তিনি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে নিরপেক্ষভাবে তার ভূমিকা পালন করবেন, কারও প্রতি রাগ-অনুরাগ-বিরাগ প্রদর্শন করবেন না এবং উপদেষ্টামণ্ডলীকে নিরপেক্ষভাবে আবার যেন ঢেলে সাজান সেই প্রস্তাবও আমরা রেখেছি। আমরা মনে করি জাতি তার কাছে চূড়ান্ত নিরপেক্ষতা আশা করে।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) ইতোমধ্যে যথেষ্ট সময় ক্ষেপণ করেছে। আশা করি তারা আর বেশি সময় নেবেন না। এই মাসের মধ্যে সবকিছু কম্পাইল করা সম্ভব হবে বলে মনে করি।’