
নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি শিক্ষাবর্ষে সরকারি নিয়ম ভেঙে ১৫ লাখের বেশি নিম্নমানের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এসব বই ছাপায় জড়িত রয়েছে ২৯টি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান। বইগুলোতে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী নির্ধারিত মানের কাগজ ব্যবহার করা হয়নি। বিষয়টি ধরা পড়ে এনসিটিবির নিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠান ‘হাই-টেক সার্ভে অ্যান্ড ইন্সপেকশন সার্ভিস বিডি’র প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বই ছাপার জন্য নির্ধারিত ছিল ৮০ জিএসএম কাগজ, কিন্তু ছাপা হয়েছে ৫৬ থেকে ৭৫ জিএসএমের পাতলা কাগজে। মুদ্রণ ও বাঁধাইতেও দেখা গেছে অসংগতি। রিপোর্টটি ১৮ জুন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) জমা দেওয়া হয়।
সবচেয়ে বেশি নিম্নমানের বই ছেপেছে অ্যারিস্ট্রোক্রেট সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড—২ লাখ ৪০ হাজার ৬৪২ কপি। এরপর রয়েছে পাঞ্জেরি প্রিন্টার্স (১,৯৯,৮৫১ কপি), লেটার অ্যান্ড কালার (১,১৭,৯৩৪), মাস্টার সিমেক্স পেপার লি. (৯৫,১৬৯), এবং নাহার প্রিন্টার্স (৮৯,৪০০)।
বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
আমাজন প্রেস (৭১,০০০), টাঙ্গাইল অফসেট প্রেস (৫৭,৮২৭), বর্ণমালা প্রেস (৪৪,১৫০), দিগন্ত অফসেট (৪৪,৬২৩), রেদওয়ানিয়া প্রেস (৪৫,৪২১), দ্য গুডলাক প্রিন্টার্স (৩০,৬৭৬), সুবর্ণা প্রিন্টার্স (২৯,৭৫৫), নাইমা আর্ট প্রিন্টার্স (৩৫,০০০)।
এই বছরের জন্য মোট সাড়ে ৩৯ কোটির বেশি বই ছাপানো ও বিতরণ করা হয়েছে চার কোটির মতো শিক্ষার্থীর মধ্যে। ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এ কাজ পেয়েছে ১১৬টি প্রতিষ্ঠান।
এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক মো. হাফিজুর রহমান জানান, যেসব প্রতিষ্ঠান মানসম্পন্ন বই সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের চিঠি দিয়ে রিপ্লেসমেন্টের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা না হলে জামানতের ২০ শতাংশ কেটে নেওয়া হবে।
তবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিবেদনের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা দাবি করছে, প্রকৃত নমুনা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ হয়নি। এনসিটিবির কিছু কর্মকর্তাও মান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভালো মানের কাগজে বই ছাপিয়ে পুনরায় সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করলে তাদের অর্থ কর্তনের পাশাপাশি অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।