
ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে আজ ইন্তেকাল করেছেন’ ও ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নয়াদিল্লিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন’ শীর্ষক শিরোনামে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টেলিভিশন এবং চ্যানেল 24-এর ডিজাইন সম্বলিত দুইটি পৃথক পৃথক ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়াও একই দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমস-এর ফটোকার্ড দাবিতেও একটি ছবি আলোচিত ফটোকার্ডগুলোর সঙ্গে প্রচার করা হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ থেকেও শেখ হাসিনার মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করা হয়েছে- এমন দাবিতে একটি স্ক্রিনশটও ফেসবুকে ঘুরছে। স্ক্রিনশটটিতে দেখা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পেজ থেকে শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করে“শোক সংবাদ, দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের প্রিয় নেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি স্বৈরাচার পরবর্তী বাংলাদেশের উন্নয়নে অমূল্য অবদান রেখেছেন, তিনি আর আমাদের মাঝে আর নেই। দলের বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে এই শোক সংবাদ নিশ্চিত হয়েছে।” শীর্ষক পোস্ট করা হয়েছে।
তবে শেখ হাসিনার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে মৃত্যুর দাবিটি সত্যি না। এ বিষয়ে বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকিং বা তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। তাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশীয় ও ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যমের নকল ফটোকার্ড তৈরি ও আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের নামে ভুয়া স্ক্রিনশট তৈরি করে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডগুলোতে উল্লিখিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে শেখ হাসিনার মৃত্যুর দাবিটির সত্যতা পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে আলোচিত ফটোকার্ডগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।
‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নয়াদিল্লিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে চ্যানেল 24-এর লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তী অনুসন্ধানে চ্যানেল 24-এর লোগো ও ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নয়াদিল্লিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন” শীর্ষক শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, চ্যানেল 24-এর ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে চ্যানেল 24-এর ফেসবুক পেজে ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রচারিত আরেকটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নয়াদিল্লিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন’ শীর্ষক শিরোনামে চ্যানেল 24-এর নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটিকে ভুয়া বলে শনাক্ত করা হয়। এছাড়াও পাঠকদের বিভ্রান্তি এড়াতে চ্যানেল 24-এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও অনলাইনের সাথে যুক্ত থাকার আহ্বানও জানানো হয় ফটোকার্ডটির মাধ্যমে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে আজ ইন্তেকাল করেছেন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে যমুনা টেলিভিশনের লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।’
পরবর্তী অনুসন্ধানে যমুনা টেলিভিশন-এর লোগো ও ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে “পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে আজ ইন্তেকাল করেছেন” শীর্ষক শিরোনামে কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, যমুনা টেলিভিশনের ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি, যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলোর সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটিতে ব্যবহৃত ফন্টের ডিজাইনেরও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।
আলোচিত পোস্টগুলিতে ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমস-এর ওয়েবসাইটের ঠিকানা সম্বলিত ‘Former Bangladeshi Prime Minister Passes Away in india’ শীর্ষক ইংরেজি শিরোনামের আরেকটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়। তবে উক্ত ফটোকার্ডে এটি প্রকাশের কোনো তারিখ উল্লেখ নেই।
ওয়েবসাইটের সূত্র ধরে হিন্দুস্থান টাইমস-এর ফেসবুক পেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে হিন্দুস্থান টাইমসের ফটোকার্ডের ডিজাইনের পার্থক্য রয়েছে। দুটি ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন।
এছাড়াও হিন্দুস্থান টাইমসের ওয়েবসাইটেও এমন দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজের পোস্টটির বিষয়ে অনুসন্ধানে তাদের ভেরিফাইড পেজটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার এমন কোনো পোস্টের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। এছাড়াও আলোচিত পোস্টটিতে আওয়ামী লীগের পেজে একটি প্রোফাইল পিকচার দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে পেজটিতে কোনো প্রোফাইল পিকচার দেওয়া নেই।
সুতরাং, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে মারা গিয়েছেন দাবিতে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টেলিভিশন, চ্যানেল 24 কিংবা হিন্দুস্থান টাইমসের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো ভুয়া ও বানোয়াট।’