নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের আগস্টে। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালে। কিন্তু নকশায় গুরুতর ত্রুটি ধরা পড়ায় কাজ স্থবির হয়ে পড়ে। সংশোধন করতে গিয়ে কেটে গেছে চার বছর, বাড়তে হয়েছে মেয়াদ ও ব্যয়—৪৭০ কোটি টাকা বেড়ে নতুন ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা।
প্রকল্পের সংশোধিত উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) বর্তমানে একনেক সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নকশা সংশোধন, সরঞ্জাম নষ্ট হওয়া, এবং মাঠপর্যায়ে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় ২০২৭ সালের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটি প্রথম একনেকে অনুমোদিত হয় ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর, ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। এর আওতায় আন্তর্জাতিক মানের টার্মিনাল ভবন, ফুয়েলিং সিস্টেম, সাব-স্টেশন, ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা, এসকালেটরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের কথা ছিল।
প্রকল্পের নকশা তৈরি করে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইউশিন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন ও হীরিম আর্কিটেক্টস অ্যান্ড প্ল্যানার্স (ইউশিন-হীরিম জেভি)। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে চীনের বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তবে মাঠপর্যায়ের কাজ শুরুর পর দেখা যায়, প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবনের মেজানাইন ফ্লোরের উচ্চতা কিছু স্থানে প্রয়োজনের তুলনায় কম। এতে মূল নকশা পুনরায় পর্যালোচনা ও সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে।
সংশোধিত মাস্টারপ্ল্যানে রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের মাঝে ওপেন ড্রেন যুক্ত করা হয়, যা আগে কাভার্ড ড্রেন ছিল। পাশাপাশি অ্যাপ্রোন, ট্যাক্সিওয়ে, পার্কিং, অ্যাপ্রোচ রোডসহ বেশ কিছু স্থাপনার নকশাও পরিবর্তন করা হয়। কার্গো বিল্ডিং ও নতুন ফায়ার স্টেশন নির্মাণ বাদ দিয়ে খরচ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
বেবিচকের সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া জানান, ওসমানী বিমানবন্দর দেশের তৃতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। প্রবাসী নির্ভর সিলেট অঞ্চলের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পায়ন ও গ্যাস সংযোগের সুযোগ বাড়ায় এখানকার যাত্রীচাপও ক্রমবর্ধমান।
গত ২ জুলাই অনুষ্ঠিত পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠকে প্রকল্পটি ২০২৭ সালের মধ্যে শেষ করতে, হালনাগাদ আইকাও নীতিমালা অনুযায়ী ডিপিপি পুনর্গঠন করতে এবং ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা উপস্থাপন করতে বলা হয়। একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত হয়—২০ কার্যদিবসের মধ্যে ডিপিপি না পাঠালে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে অনাগ্রহ প্রমাণিত হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক বলেন, “আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। প্রকল্প সংক্রান্ত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী, নকশা ও অবকাঠামোগত সমন্বয় ছাড়া এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আর বারবার নকশা সংশোধন, কাজের দীর্ঘসূত্রতা ও বাজেট বাড়ার ফলে এ প্রকল্প এখন জনসাধারণের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.