
নিজস্ব প্রতিবেদক: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২১ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। আধুনিক যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই টার্মিনাল এখন প্রায় প্রস্তুত হলেও অপারেটর নিয়োগে বিলম্বের কারণে সেটি উদ্বোধন করা যাচ্ছে না। ফলে বিপুল অর্থে গড়ে তোলা এই অবকাঠামো অনন্যসাধারণ সম্ভাবনা নিয়েও বর্তমানে অলস পড়ে আছে।
সূত্র জানায়, মূল ভবনের নির্মাণ, বোর্ডিং ব্রিজ, ট্যাক্সিওয়ে, পার্কিং বে, লাগেজ বেল্ট, ইমিগ্রেশন ও চেক-ইন কাউন্টারসহ বেশিরভাগ যন্ত্রাংশ স্থাপন শেষ হয়েছে। টার্মিনালের ভিভিআইপি ও ভিআইপি অংশে কিছু টাইলস ও সিলিংয়ের কাজ চলমান। কাস্টমসের ১৬টি মেশিন এখনো স্থাপন হয়নি, যা পুরো কার্যক্রম শুরু করার পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানিয়েছে, টার্মিনাল পরিচালনায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (PPP) পদ্ধতিতে একটি জাপানি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কনসোর্টিয়ামের নেতৃত্বে রয়েছে সুমিতোমো করপোরেশন, যার সঙ্গে জাইকা এবং জাপানের ভূমি, অবকাঠামো ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ও অংশীদার। জুনের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হলে টার্মিনাল চালু করতে আরও ছয় থেকে আট মাস সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, “টার্মিনালটি অপারেশনের জন্য প্রায় প্রস্তুত। যন্ত্রপাতি প্রতিদিন পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে। তবে ভিভিআইপি অংশ ও কাস্টমস যন্ত্রাংশ সম্পূর্ণ না হওয়ায় শতভাগ প্রস্তুত বলা যাচ্ছে না।”
চুক্তি স্বাক্ষরের পর অপারেটর প্রতিষ্ঠানকে জনবল নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, ট্রায়াল রান এবং স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (SOP) প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। প্রাথমিকভাবে প্রায় ছয় হাজার জনবল প্রয়োজন হবে বলে জানানো হয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানান, অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে টার্মিনালটি চালু করতে চায়। তিনি বলেন, “জাপানি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। অপারেশন চুক্তি সম্পন্নের পরই কার্যক্রম শুরু করা হবে।”
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয় এবং ২০২০ সালের এপ্রিলে নির্মাণকাজ শুরু করে জাপানি মিৎসুবিশি, স্যামসাং ও ফুজিতার সমন্বয়ে গঠিত এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম। ২০২৩ সালের জুনে স্টিল স্ট্রাকচারের কাজ শেষ হয় এবং অক্টোবর মাসে ‘সফট ওপেনিং’ অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছরের শুরু থেকেই পুরো টার্মিনাল প্রস্তুত বলে দাবি করা হলেও অপারেটর নিয়োগ না হওয়ায় কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে।