
অনলাইন ডেস্ক: গাজায় যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনিদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের আড়ালে চলছে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন—এমন বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর সাবেক এক নিরাপত্তা ঠিকাদার। ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ইসরায়েলি সেনা ও ত্রাণ সংস্থার নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মীরা নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ওই নিরাপত্তা ঠিকাদার বলেন, ‘ত্রাণ নিতে আসা নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের ওপর শুধুমাত্র দেরিতে কেন্দ্র ত্যাগ করায় মেশিনগান থেকে গুলি চালানো হয়। এমনকি কেউ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সহকর্মীরা তা “স্কোর” হিসেবে উদ্যাপন করত।’
বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এসব অভিযোগ সংস্থার কাছে জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং জিএইচএফ ঘটনাগুলো অস্বীকার করে জানায়—আহতরা হয়তো ক্লান্তিতে পড়ে গিয়েছিল কিংবা অসাবধানতাবশত আহত হয়েছে।
জিএইচএফ দাবি করেছে, অভিযোগকারী ওই ব্যক্তি চাকরিচ্যুত হয়েছেন বলেই মিথ্যা প্রচার করছেন। তবে সাবেক ঠিকাদার পাল্টা দাবি করেছেন, তিনি নিজেই চাকরি ছেড়েছেন—নীতিগত কারণে।
তিনি বলেন, ‘সংস্থার ভিতরে দায়মুক্তির সংস্কৃতি ছিল। বলা হতো—হুমকি মনে হলে গুলি চালাও, পরে ব্যাখ্যা দাও।’ তার ভাষ্য অনুযায়ী, সব ত্রাণকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি চললেও এসব নৃশংসতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বিবিসি জানিয়েছে, চলতি বছরের মে মাসে কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে জিএইচএফের ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪০০ ফিলিস্তিনি।
বিতর্কিত এই সংস্থার কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছে অক্সফাম, সেভ দ্য চিলড্রেনসহ বিশ্বের ১৭০টির বেশি দাতব্য সংস্থা ও এনজিও।
তবে জিএইচএফ দাবি করছে, তারা এখন পর্যন্ত ৫ কোটি ২০ লাখ খাদ্যপ্যাকেট বিতরণ করেছে এবং তাদের কঠোর নিয়ন্ত্রণেই ত্রাণ সঠিকভাবে গন্তব্যে পৌঁছায়। তারা আরও অভিযোগ করে, অন্যান্য সংস্থার ত্রাণ মাঝপথে লুট হয়ে যায়—তারা তা ঠেকাতেই ব্যর্থ।
এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো জিএইচএফকে ‘ইসরায়েলি দমন-পীড়নের হাতিয়ার’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে।
গাজার চলমান মানবিক সংকটে ত্রাণ কার্যক্রম নিয়েই এখন নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে—আসলেই কী ত্রাণ, না কি মৃত্যুর ফাঁদ?