তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্য অধিকার, কারও করুণা নয়: তারেক রহমান

অনলাইন ডেস্ক: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ভারতের অপ্রতিবেশীমূলক আচরণের কারণে আজকে তিস্তাপারের লাখো মানুষ বন্যায় ও খরায় দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। পানির অভাবে এখন তিস্তার বুক ধু-ধু বালুচর।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য জাতিসংঘে যাবে। একই সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে অসম, অন্যায্য ও একতরফা সব চুক্তি পুনর্বিবেচনা করা হবে।

মঙ্গলবার রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার মাঝে তিস্তা রেলওয়ে সেতুসংলগ্ন চরে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তাবায়নের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশের দ্বিতীয় ও সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে করেন ‘তিস্তা নদী রক্ষা কমিটি’র প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু।

‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগান সামনে রেখে এই কর্মসূচি গাইবান্ধা, রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও কুড়িগ্রামের ১১টি স্থানে সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। গত সোমবার তিস্তা নিয়ে এই কর্মসূচি উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সমাপনী বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘সারা বিশ্ব আজকে দেখে রাখুক, তিস্তাপারের লাখো মানুষ ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত। উত্তরাঞ্চলের মানুষেরা আজকে সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চায়, ভারতের সঙ্গে যে অভিন্ন ৫৪টি নদী, এই নদীর পানির ন্যায্য হিস্যাপ্রাপ্তি, কারো কোনো করুণার বিষয় নয়। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এটা বাংলাদেশের প্রাপ্য। অথচ তিস্তা নদীর পানির জন্য আজকে আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে’।

বাংলাদেশের মানুষ তথা উত্তরাঞ্চলের মানুষদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। এই পানিবণ্টন নিয়ে আমাদের প্রতিবেশী দেশ, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে অপ্রতিবেশীমূলক আচরণ করেই চলছে। আজকে ৫০ বছর হলো, ফারাক্কার অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পাইনি। এখন আবার তিস্তা বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সব আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে প্রতিবেশী দেশ আমাদের উজানে, গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করেছে।

ওই বাঁধের মাধ্যমে তিস্তার পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে। একদিকে পানির অভাবে ক্ষতি হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল। আবার হঠাৎ করে পানি ছেড়ে দিচ্ছে, এতে ভেসে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি। কৃষকের আবাদি ফসল ভাসিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে নদীভাঙন তো আছেই, প্রতিবছর লাখো কোটি টাকার ফসলের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।’

ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ তুলে তারেক রহমান বলেন, “গত ৫ আগস্ট একটি খুনি স্বৈরাচারী এই দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। এই স্বৈরাচার একটি কথা বলেছিল, ‘ভারতকে যা দিয়েছি তা তারা সারা জীবন মনে রাখবে।’ এই ভারত শুধু স্বৈরাচার ও পলাতককেই মনে রেখেছে। বাংলাদেশের জনগণকে তারা মনে রাখেনি। সে জন্য তিস্তাপারের বিক্ষুব্ধ মানুষদের প্রশ্ন, পলাতক স্বৈরাচারকে আশ্রয় দেওয়া ছাড়া ভারত কি বাংলাদেশকে কিছু দিয়েছে? কিচ্ছু দেয়নি। সার বিশ্বেই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সমস্যা থেকেই থাকে। নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষা করে সবাই সমস্যার সমাধান করে। এটাই কূটনৈতিক নীতি। কিন্তু ৫ আগস্ট যে স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে, জোর করে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে সে নিজেকে ভারতের সেবাদাসে পরিণত করেছিল।”

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারত যৌথ নদী কমিশন সম্পূর্ণ অকার্যকর করে রেখেছিল। এখনো ফারাক্কা সমস্যার সমাধান হয়নি, তিস্তার চুক্তিও হয়নি। অথচ আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে ওই পলাতক স্বৈরাচার আমাদের বন্দরগুলো ভারতকে ব্যবহারের একতরফা সুবিধা দিয়ে গেছে। ওই সব চুক্তিতে মিনিমাম ন্যায্যতা রক্ষা করা হয়নি। বাংলাদেশের জনগণ মনে করে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে প্রয়োজনে অসম, অন্যায্য ও একতরফা যেসব চুক্তি করা হয়েছে, সেগুলো পুনর্মূল্যায়ন বা পুনর্বিবেচনা করা দরকার। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়, আমাদের পররাষ্ট্রনীতির এটি মূলনীতি। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে এই নীতি হয়তো পুনর্বিবেচনা করা দরকার। বর্তমান বিশ্বে স্থায়ী শত্রু, স্থায়ী মিত্র বলে কিছু নাই। বরং একটা দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের সম্পর্ক হবে পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা হবে ন্যায্যতা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে। সুতরাং সম্পর্ক রক্ষা করার ক্ষেত্রে নিজ দেশের এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষাই হতে হবে প্রথম এবং প্রধান অগ্রাধিকার।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ সীমান্তে ফেলানির ঝুলন্ত লাশ আর দেখতে চায় না। সীমান্তে নিরহ বাংলাদেশিদের রক্তাক্ত মরদেহ আর মানুষ দেখতে চায় না। প্রতিবেশী দেশ ভারত যদি তিস্তার ন্যায্য হিস্যা না দেয় বা দিতে যদি দেরি করে, অনীহা দেখায় তাহলে দেশ ও জনগণের স্বার্থে, কৃষককে বাঁচাতে, নদী বাঁচাতে, আমাদেরকেই বাঁচার পথ খুঁজে নিতে হবে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সকল সম্ভাব্য বিকল্পকে কাজে লাগাতে হবে। পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের এ দাবি তুলে ধরতে হবে। একইভাবে প্রতিবেশীদের সঙ্গেও কূটনৈতিকভাবে আলোচনা শুরু করতে হবে আবার। আর সময়ক্ষেপণ না করে ১৯৯২ সালের ওয়াটার কনভেনশন এবং ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ কনভেনশনে স্বাক্ষর করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলকে মরুকরণ হাত থেকে বাঁচাতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। বিএনপি জনগণের ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতা পেলে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করব। পাশাপাশি তিস্তার শাখা নদীগুলো খনন করা জরুরি এবং আমরা খনন করব। দেশের বিভিন্ন স্থানে জলাধার নির্মাণ এবং শহীদ জিয়ার খাল খনন কর্মসূচি চালু করব।’

পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের প্রতি সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের মানুষের সব ধরনের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে পলাতক স্বৈরাচার দেশে মাফিয়া সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। পলাতক স্বৈরাচার সরকারের আমলে জাতীয় নির্বাচনকে তামাশায় পরিণত করা হয়েছিল। ভোট দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করার কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মাফিয়া পালিয়া যাওয়ার পর আবার জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু সরকারের হঠকারী কোনো সিদ্ধান্তে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার ও তার দোসররা পুনর্বাসনের সুযোগ না পায়, সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনের কথা শুনলেই অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ কেউ বিচলিত হয়ে পড়েন। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একেক উপদেষ্টার একেক বক্তব্য মাফিয়া পলাতকদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পথ সুগম করে দেয়। এ জন্যই বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নির্বাচনের রোডম্যাপ বারবার জানতে চেয়েছে।’

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ স্থানীয় লাখো মানুষ।

এর আগে দিনভর তিস্তা নদীর পানিতে নেমে সাধারণ মানুষ ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাও’ ‘সিকিম না তিস্তা, তিস্তা-তিস্তা’, তিস্তা মেগাপ্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে ইত্যাদি স্লোগান দেয়। এ ছাড়া এদিন সন্ধ্যায় ভারতের কাছ থেকে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে মশাল প্রজ্বালন করা হয়। এরপর আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিল্পী দেশীয় গান পরিবেশন করেন।’

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

বাংলাদেশে ট্রাম্প সমর্থকদের গ্রেফতার শিরোনামে ভারতের পত্রিকার ভুয়া প্রতিবেদন

ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায় তার সমর্থনে মিছিল করতে চাইলে বাংলাদেশ থেকে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে উল্লেখ করে

সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় যৌতুক মামলার সাজাপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী রবিন গ্রেফতার

জুয়েল রানা: সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার যৌতুক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি কে গ্রেফতার করেছে সলঙ্গা থানা পুলিশ। সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকালে বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলা থেকে

মণিরামপুরের মশিয়াহাটীতে গ্রামীণ ঐতিহ্য ভাটি পুজো অনুষ্ঠিত

জেমস আব্দুর রহিম রানা: যশোরের মণিরামপুরের মশিয়াহাটীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্রামীণ লেকজ উৎসব ভাটি পূজো। মঙ্গলবার সকালে শুরু হয়ে নানা আনুষ্ঠানিকতায় শেষ হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার। ভাটি

মেয়েদের দখলে পশ্চিববঙ্গের বিভিন্ন শহরের রাতের রাজপথ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন জেগে উঠল পশ্চিমবঙ্গ তথা গোটা ভারত। বাড়তে থাকল ভিড়। বুধবার (১৪ আগস্ট) রাতে রাস্তার দখল নিতে শুরু করল

বড় পরিবর্তন আসছে গুগল প্লে স্টোরে, থাকবে না হাজার হাজার অ্যাপ

ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: গুগল তাদের প্লে স্টোরের অ্যাপগুলোর জন্য নিয়ে আসছে নতুন পরিবর্তন। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে হাজার হাজার অ্যাপ ডিলিট করা হতে পারে

রাজনীতি করার জন্য শেখ হাসিনা আর দেশে ফিরতে পারবেন না: নাহিদ ইসলাম

ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘আর রাজনীতি করার জন্য দেশে ফিরতে পারবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।