নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের বহুল আলোচিত তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা ও পুনর্গঠন প্রকল্প চীনা অর্থায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে। জুলাই মাসে প্রথম ধাপে ৫৫ কোটি ডলার চেয়ে প্রস্তাব পাঠানোর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব দেয়নি বেইজিং।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানোর পর একাধিকবার বার্তা পাঠানো হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। প্রথম ধাপে বাঁধ নির্মাণ, নদী খনন, ভূমি উন্নয়নসহ কাজের জন্য মোট প্রয়োজন ৭৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যার মধ্যে ৫৫ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে চীনের কাছ থেকে। পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি) চীনের কারিগরি সহায়তায় প্রকল্পের পরিকল্পনা ও ব্যয় কাঠামো তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের উজানে পানির প্রবাহ আটকে দেওয়ায় ভাটিতে বাংলাদেশের লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার লাখো মানুষ কৃষি, মৎস্য ও জীবিকায় সংকটে পড়েছে।
সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে বৈঠকে প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, শিগগিরই একটি চীনা বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশ সফর করে সরেজমিন পরিদর্শন করবে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না আসা পর্যন্ত বিনিয়োগ নিশ্চিত নয়।
বাংলাদেশ প্রথমবার ২০২১ সালের মার্চে চীনের কাছে অর্থায়নের অনুরোধ জানায়। ২০২৩ সালের মার্চে চীন প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) জমা দিতে বলে। ইতিমধ্যে চীনা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার চায়না সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করেছে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, প্রকল্পটি ভূরাজনৈতিক প্রভাবের সঙ্গেও যুক্ত। কারণ ৪১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তার মধ্যে ৩০৫ কিলোমিটার ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গে এবং মাত্র ১০৯ কিলোমিটার বাংলাদেশের ভেতরে। ফলে ভারত-চীন উভয় দেশের স্বার্থ এ প্রকল্পে জড়িয়ে আছে।
চীনা অর্থায়ন পেলে প্রথম ধাপে জমি পুনরুদ্ধার, বাঁধ নির্মাণ, গার্ড স্পার, নদী খনন, পরিবেশ ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন করা হবে। পরবর্তী ধাপে নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ, বন্যা ব্যবস্থাপনা, নৌপথ উন্নয়ন, টাউনশিপ গড়ে তোলা ও জীবিকা পুনর্গঠন পরিকল্পনায় রয়েছে।
সরকার মনে করছে, চীনের মতো বড় অর্থনীতির সহায়তা ছাড়া এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবে অর্থায়নে দেরি হওয়ায় বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তবু আশাবাদী কর্মকর্তারা বলছেন, তিস্তা বাংলাদেশের জীবনের অংশ, আর চীন সহযোগিতার হাত বাড়াবে বলেই তাদের বিশ্বাস।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.