
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা নিজের একটি ব্যবসায়ীক আলাদা বলয় গড়ে তোলেন। তার সময়ে বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, সামিট, এস আলম, ওরিয়ন, নাসা, নগদ-এর মতো সিন্ডিকেট ব্যবসার উত্থান ঘটে। এসব সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী যারা অংশীদার হতেন না বিশেষ করে হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকীকে চাঁদা না দিতে অপরাগতা জানাতেন সেসব ব্যবসায়ীরাই পড়ে যেতেন দীর্ঘমেয়াদি সংকটে। হাসিনার অপশাসনের শুরুর দিকে দুর্বৃত্ত ব্যবসায়ীদের দ্বারা গঠিত মাফিয়া সিন্ডিকেট বানাতে যাচ্ছেন সেটা আঁচ করতে পারেননি ডেসটিনির কর্ণধার রফিকুল আমীন।
তিনি স্রোতের সাথে গা ভাসাতে না চেয়ে এবং তারিক সিদ্দিকীর অন্যায় আবদার মিটাতে না পেরে তারিক সিদ্দিকীর আক্রোশের শিকার হন রফিকুল আমীন। মূলত যেদিন রফিকুল আমীন ঘোষণা দিয়েছিলেন ডেসটিনির টাকা দিয়েই আমরা পদ্মাসেতু নির্মাণ করবো। এই ঘোষণাই কাল হয়েছিল জনাব রফিকুল আমীনের। ডেসটিনির লক্ষ লক্ষ গ্রাহকদের হাজার কোটি টাকা হাসিনার রাষ্ট্রদস্যু লুট করার জন্য ফন্দি শুরু করে। এবং হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করার জন্য রফিকুল আমীনকে গ্রেফতারের উদ্যেগ নেয় হাসিনা ও রেহানার রাষ্ট্রদস্যু সিন্ডিকেটের প্রধান শেখ রেহানার দেবর তারিক সিদ্দিকী। এরই অংশ হিসেবে প্রথমে ৫০০ কোটি টাকা দাবি ডেসটিনি থেকে।
প্রসাশন ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে হাসিনার গুম খুন ও রাষ্ট্রদস্যু সিন্ডিকেটের মাস্টার মাইন্ড রিটায়ার্ড মেজর জেনারেল তারিক সিদ্দিকী তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এই তারিক সিদ্দিক ডেসটিনির রফিকুল আমীনের কাছে ৫০০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। বাংলাদেশের হাজার হাজার বেকারদেও কর্মসংস্থাানের ব্যবস্থা করেছিলেন ডেসটিনি গ্রুপের মাধ্যমে। তিনি এই কনফিডেন্সের মাধ্যমে তারিক সিদ্দিকীর কাছে মাথা নত করেননি। তারিক সিদ্দিকীকে চাঁদা না দেয়াতে রাষ্ট্রদস্যু সিন্ডিকেট দলদাস মিডিয়ার মাধ্যমে রফিকুল আমীনকে লক্ষ্য করে থাকেন মিডিয়ার নির্লজ্জ অপপ্রচার।
আওয়ামী তাঁবেদার দেশের বিভিন্ন মিডিয়া ডেসটিনির বিরুদ্ধে একের পর এক নেতিবাচক সংবাদ প্রচার হতে থাকে। এর সবগুলোই ছিল বাস্তবতা বিবর্জিত আষাঢ়ে গল্প। তারিক সিদ্দিকীর প্রযোজনায় ও পরিকল্পনায় সাজানো মিডিয়া ট্রায়াল এতটাই কার্যকরি হয়েছিল যে বাংলাদেশে মানুষ ডেসটিনিকে একটা ভাঁওতাবাজী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভুল বুঝতে থাকে। অথচ গ্রাহকদের সমস্ত অর্থই ডেসটিনি একাউন্টে সংরক্ষিত আছে। গ্রাহকদের লভ্যাংশসহ অংশীদারদের ফেরত দেয়ার জন্য গ্রাহকদের টাকায় গড়ে তোলা হয় হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প। যে সমস্ত মিডিয়ায় এসব মিথ্যা ও সাজানো সংবাদ প্রকাশ হচ্ছিল তারা একটিবার যাচাইয়ের প্রয়োজন মনে করলেন না ডেসটিনির আদৌ একটি টাকাও ব্যাংক খেলাপি ছিল কিনা। অথবা ডেসটিনির মূল পুঁজি গড়ে তোলার ভিত্তি কোথায় ছিল।
প্রকৃত সত্য হলো কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে লোন না নিয়ে বা সরকারের আর্থিক সহযোগীতা না নিয়ে শুধুমাত্র নিজেরা নিজেরা উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রাউড ফান্ডিং করে সমবায়ের ভিত্তিতে ডেসটিনির মতো এত বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন রফিকুল আমীন।
যে বছর ডেসটিনিকে জোর করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল তার আগের বছর অর্থ্যাৎ ২০১১-১২ সালে সরকারকে ৪৫০ কোটি টাকা ট্যাক্স দিয়েছিল ডেসটিনি গ্রুপ।
ডাইরেক্ট সেলিং বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং করেও ডেসটিনি হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর চাকরি বা ব্যবসার ব্যবস্থা করেছিল। ২০০০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৩০টির বেশি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল ডেসটিনি। ডেসটিনির মাধ্যমে হাজার হাজার বেকার ছেলে মেয়ের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছিল।
যেমন-বেস্ট এয়ারলাইন্স, বৈশাখী টেলিভিশন, জুট মিল, সিনেমা হল, কক্সবাজার ফোর স্টার হোটেল, দৈনিক ডেসটিনিসহ ৬৪ জেলায় নিজেদের ভবন তৈরির জমি, বনায়নের জন্য জমি কিনে কোটি কোটি বৃক্ষরোপনসহ ২০ বছরের জন্য বিশাল কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে ডেসটিনি। শুধু মাত্র ঢাকা শহরের কাকরাইল, বিজয়নগর, নয়াপল্টন, পুরানা পল্টন, ধানমণ্ডি, বনানী ও টঙ্গির মতো জায়গায় রয়েছে ডেসটিনির কয়েক লক্ষ বর্গ কিলোমিটার ফ্ল্যাট। শত শত একর জমি রয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ সারা বাংলাদেশে। সব জমিই গ্রাহকের প্রতিষ্ঠান ডেসটিনির নামে। রফিকুল আমীনের ব্যক্তিগত নামে ডেসটিনির অর্থে কেনা কোনো সম্পত্তি নেই। এসব সম্পত্তির বেশিরভাগই দখল করে আওয়ামী দস্যুরা। ঢাকায় আইএফআইসি ব্যাংকের পাশের একটা জমি ডেসটিনির মালিকানা ছিল যা দরবেশ বাবা নামে খ্যাত সালমান এফ রহমান দখল করেন। সেখানে তার ব্যাংকের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন তিনি। ডেসটিনি গ্রুপের জমি, ফ্ল্যাট বা অন্যান্য সকল সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার কোটি টাকা।,
২০১২ সালের মে মাসে কথিত স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার দেবর তারিক সিদ্দিকী একটি জমি কিনে দেয়ার নাম করে ভয় দেখিয়ে ৭৮ কোটি টাকার একটা বায়নানামা করে ডেসটিনি গ্রুপের এমডি রফিকুল আমীনের কাছ থেকে। কিন্তু ৫০০ কোটি টাকা চাঁদা না দিলে সবাইকে জেলে দেবার হুমকি দেয় তারিক সিদ্দিক। টাকা না পেয়ে তারিক সিদ্দিক ২০১২ সালের জুলাই মাসে দুদককে দিয়ে মামলা করিয়ে ডেসটিনির মালিকানাধীন একমাত্র বৈশাখী টেলিভিশন ছাড়া বাদবাকী সকল প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়। সেই সময় থেকে বৈশাখী টিভিও স্বৈরাচার হাসিনার দোসররা দখল করে।’
এই টিভির ডেসটিনি গ্রুপ ৯৮ শতাংশের মালিক হলেও বৈশাখী টিভি এমডি রফিকুল আমীন ও মোহাম্মদ হোসাইনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে ১২ বছর ধরে তারা জেল খাটায়। এসব কিছু সম্ভব হয়েছে দুদক ও তারিক সিদ্দিকীর প্রতিহিংসা বাস্তবায়নের মাধ্যমে। তারিক সিদ্দিক বায়না করা জমি তার নামে লিখে দিতে রফিকুল আমিনকে জেল খানায় এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার পাঠিয়ে চাপ দেয়। রফিকুল আমীন রাজি না হলে জমি দখল করবে বলে হুমকি দেয় এবং সারাজীবন জেলে থাকতে হবে জানিয়ে দেয়।
২০১২ সালের অক্টোবর মাসের ১০ তারিখ আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে জনাব রফিকুল আমীন ও মোহাম্মদ হোসাইনসহ আত্মসমর্পণ করেন। ১২ বছর পর ইন্টেরিম সরকারের সময় তাদের জামিন হয়।
শুধু তাই নয় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও তারা শাস্তি ভোগ করেন ১২ বছর।
একবার আদালত জামিন দিলেও, ২৮০০ কোটি টাকা আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত অবস্থায় তাদের ৩৫ লাখ গাছ বিক্রি করে ছয় সপ্তাহের মাঝে টাকা জমা দেয়ার যে উদ্ভট নির্দেশ আওয়ামী আদালত দেয়। সত্যি তা বিবেবর্জিত বিচারিক আদেশ ও হাস্যকর।
পুুলিশ ও দুদকের জিম্মায় থাকা এসব গাছ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দস্যুরা হরিলুট করে নিয়ে যায়। তারিক সিদ্দিকীর নির্দেশনায় আদালত ও দুদকের ভয়াবহ অপকর্মের ফলে একদিকে যেমন তাদের জামিন দীর্ঘায়িত হয় অন্যদিকে ডেসটিনি কোম্পানির হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি ও সম্পদ লুট ও বেদখল অবস্থায় পরিত্যাক্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়।’
উল্লেখ্য যে ২০১২ সালে ডেসটিনি গ্রুপের প্রায় ২০০ গাড়ি জব্দ করতে হাসিনার আদালত পুলিশকে নির্দেশ দেয়। এসবের মাঝে পাজেরো ও মিশনের মতো দামি গাড়িও ছিল। পুলিশ অন্যায়ভাবে এসব গাড়ি ভোগ দখল করে ও বিক্রি করে দেয়।
একইভাবে ফার্মগেটে অবস্থিত আনন্দ-ছন্দ সিনেমা হলগুলোরও একই অবস্থা। ১২ বছর ধরে পরিত্যাক্ত হয়ে শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি এখন অসামাজিক কাজের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। বারিধারায় আমেরিকান সেন্টার সংলগ্ন নিজস্ব কেনা বাড়ি পুলিশ ও আনসার দখল নিয়ে ভাড়া নিয়ে খাচ্ছে। পল্টন এলাকার ফ্ল্যাটগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এরকম ছয় সাত হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি ধ্বংস কিংবা বেদখল হয়ে গেছে আওয়ামী ষড়যন্ত্রে। এসব কিছু হয়েছিল স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার আমলে।’