
নিজস্ব প্রতিবেদক: তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফেরার বিষয়ে আজ মঙ্গলবার আপিল বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ শুনানি পরিচালনা করবেন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৪ বছর আগে দেওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন বিভিন্ন ব্যক্তি। গত বছর ২৭ আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে করা ছয়টি আবেদনের মধ্যে একটি আবেদনে আপিলের অনুমতি দিয়ে আজ শুনানির দিন নির্ধারণ করেন আদালত।
এর আগে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন। রায়ে সংবিধান থেকে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পুনর্বহালের ইঙ্গিত দেওয়া হয়। তবে আপিল বিভাগের পূর্ববর্তী রায় বহাল থাকায় তা কার্যকর হয়নি।
রিভিউ আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনসহ ছয়জন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রথম চালু হয় ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের সময় ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। এই ব্যবস্থার অধীনে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এই ব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের হাইকোর্ট রায়ে উল্লেখ করা হয়, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ; সেই দৃষ্টিকোণ থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোরই অংশ হিসেবে বিবেচিত। আদালত বলেন, গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৫) জনগণের আস্থার প্রতিফলন ঘটেনি, যা গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করেছে।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সম্প্রতি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে আদালতের কার্যকর ও স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। তাঁর মতে, সুপ্রিম কোর্টের এখতিয়ার রয়েছে এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা ও সময়সীমা নির্ধারণে দিকনির্দেশনা দেওয়ার।
এদিকে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত ‘জুলাই জাতীয় সনদে’ নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার কাঠামো ও নিয়োগ প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব রয়েছে, যা সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।
সবশেষে, আজকের শুনানিকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ও সাধারণ নাগরিকরা তাকিয়ে আছেন আপিল বিভাগের রায়ের দিকে, যা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার দিকনির্দেশনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।