নিজস্ব প্রতিবেদক: কোটা সংস্কার আন্দোলন এখন নতুন রূপ গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে গতকাল দ্রোহের পদযাত্রার মাধ্যমে কোটা আন্দোলন আর শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে নেই। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবিকে ছাপিয়ে এখন সরকার পরিবর্তনের দাবিকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক নীলনকশা বাস্তবায়নের এটি চেষ্টা বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছে।'
বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারের দ্বিধা এবং কালক্ষেপণের ফলেই এই নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে এই আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ ভার নিয়েছে অন্য একটি গোষ্ঠী। যারা বাংলাদেশে অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনতে চায়। শিক্ষার্থীদেরকে ব্যবহার করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের এই নতুন রূপ এখন নতুন করে সরকার বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। যেখানে চারটি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে।
প্রথমত, বিএনপি-জামায়াত এখন সরকার হটানোর নীল নকশার ‘প্ল্যান বি’ নিয়ে এগোচ্ছে। এই ‘প্ল্যান বি’তে তাদের পরিত্যক্ত অসহযোগ আন্দোলনকে আবার ফিরিয়ে আনতে চাইছে। গতকাল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের একটি অংশের মুখ থেকে আগামীকাল রোববার অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়ানো হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত মনে করছে, লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে দ্বিতীয় দফায় দেশ অচল করে দেওয়া হবে এবং এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হবে যেখানে সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়।
দ্বিতীয়ত, বিএনপি-জামায়াতের এখন লক্ষ্য হলো কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়া। ঢাকাকে অবরুদ্ধ করে দেওয়া এবং সরকারি অফিস আদালতসহ ব্যাংক, বিমা, কলকারখানা ইত্যাদিকে বন্ধ করে দেওয়া এবং সন্ত্রাস নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে একটি অনভিপ্রেত পরিস্থিতি তৈরি করা।
তৃতীয়ত, সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো, যেখান থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব গ্রহণ করে এবং সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার চেষ্টা করা হয়।
চতুর্থত, এরকম একটি পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহল সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করবে এবং একটি সর্বদলীয় বা একটি আপৎকালীন সরকার গঠনের জন্য প্রস্তাব করবে। এ রকম একটি প্রস্তাবের রূপরেখাও এখন বিএনপি চূড়ান্ত করেছে।'
বিএনপি দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, তারা বিভিন্ন দূতাবাসে এই সরকারের বিদায়ের পর কী ধরনের সরকার গঠিত হবে তার একটি রুপরেখা দিচ্ছে। গতরাতেই এই রূপরেখাটি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেও একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই রূপরেখায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে অন্য ব্যক্তিদেরকে পছন্দ করবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সরকার জুলাই মাসে সহিংস ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত করবে, শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়াগুলো পর্যালোচনা করবে এবং দেশের রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করে একটি নতুন নির্বাচনের পথ তৈরি করবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হবে মূলত যে সন্ত্রাস এবং সহিংসতা হয়েছে সে ব্যাপারে তদন্ত করা এবং দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। তাদেরকে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ে বেঁধে দেওয়া হবে। যখন নতুন সরকার নির্বাচিত হবে তখন তারা এই সময়ের কার্যক্রমকে বৈধতা দিবে। এরকম একটি প্রস্তাব নিয়ে আজ থেকে বিএনপির নেতৃবৃন্দ দেশে বিদেশে আন্তর্জাতিক মহলে ধর্না দিবে বলেও জানা গেছে।'