
নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের দুর্যোগপ্রবণ ১৩ জেলার প্রায় দেড় কোটি মানুষ বড় ধরনের খাদ্যসংকটে পড়তে পারে। একই সময়ে তীব্র অপুষ্টিতে ভুগবে প্রায় ১৬ লাখ শিশু। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট (এফপিএমইউ) এবং জাতিসংঘের তিন সংস্থা—খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ও শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)—প্রস্তুতকৃত ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি)’ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে জানানো হয়, মে থেকে ডিসেম্বর মেয়াদে বিশ্লেষিত জেলাগুলোর ১৭ শতাংশ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে।
ঝুঁকিতে ১৩ জেলা
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বান্দরবান, রাঙামাটি, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও কক্সবাজারে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ খাদ্যসংকটে পড়বে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৫৫ লাখ।
সবচেয়ে বিপর্যস্ত জেলা কক্সবাজারে স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও চরম সংকটে পড়ছে। জেলাটির প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ খাদ্যসংকটে রয়েছে। কক্সবাজার ও ভাসানচরে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ ডিসেম্বরের মধ্যে সংকট বা জরুরি অবস্থার পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
অপুষ্টির আশঙ্কা
আইপিসি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮টি দুর্যোগপ্রবণ জেলায় ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী প্রায় ১৬ লাখ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। একই সময়ে ১ লাখ ১৭ হাজার অন্তঃসত্ত্বা নারী ও স্তন্যদায়ী মা তীব্র পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে। কক্সবাজার ও ভাসানচরের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৮১ হাজার শিশু ও ৫ হাজার মা একই পরিস্থিতিতে পড়তে পারে।
সার্বিক চিত্র
প্রতিবেদনে ৩৬ জেলার ৯ কোটি ৬৬ লাখের বেশি মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে কোনো জেলা জরুরি অবস্থা বা দুর্ভিক্ষের পর্যায়ে ছিল না। ডিসেম্বর নাগাদও ধাপ–৫ অর্থাৎ দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা নেই।
পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় সামগ্রিকভাবে খাদ্যসংকটে থাকা মানুষের সংখ্যা কিছুটা কমলেও জলবায়ু বিপর্যয়, অর্থনৈতিক মন্দা, তহবিল ঘাটতি, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা এবং খাদ্যবৈচিত্র্যের অভাব পরিস্থিতি অবনতির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
সুপারিশ
পরিস্থিতি মোকাবিলায় মানবিক সহায়তা জোরদার করা, পুষ্টিসেবা ও নজরদারি বৃদ্ধি, কৃষি ও মৎস্য খাতে সহায়তা সম্প্রসারণ এবং খাদ্যনিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছে প্রতিবেদনটি।
 
															 
				 
															 
								










