জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার সিএ (নাজির কাম ক্যাশিয়ার) সরোয়ার আলমের বিরুদ্ধে উত্থাপিত নানা অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দুদকে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) টাঙ্গাইল শহরের কোদালিয়া এলাকার জুলহাস মিয়ার ছেলে মো. আলম মিয়া সহ তিন ব্যক্তি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে ওই আবেদন করেন।
অভিযোগে প্রকাশ, ঘাটাইল উপজেলার বাসিন্দা সরোয়ার আলম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাকুরির সুবাদে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। নানা দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা আদায়ের লক্ষে তার নেতৃত্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘কমিশন বাণিজ্য’ সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে। এছাড়া তিনি এসটিএলএস নামে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে একটি ‘জুয়া’র পেইজ খুলে সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করে পেইজটি বন্ধ করে দিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, সরোয়ার আলম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকুরির সুযোগ নিয়ে আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামলে চাকুরি, লাইসেন্স ও বিভিন্ন ফাইল অনুমোদন ‘কমিশন বাণিজ্য’ করছেন। তিনি টাঙ্গাইল পৌরসভার ‘জন্মসনদ’ কার্যক্রম দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দালাল চক্রের সঙ্গে আঁতাত করে বিধি বহির্ভুতভাবে প্রতি জন্মসনদের বিপরীতে অতিরিক্ত ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্বল্প বেতনে চাকুরি করে টাঙ্গাইল শহরে সরোয়ার আলম বেশ দাপটের সঙ্গে চলাফেরা করেন। তিনি নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে ন্যূনতম ১০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার পদের বিপরীতে বেতন এবং চলাফেরা বা জীবনযাত্রার মানের মধ্যে বিস্তর ফাঁরাক লক্ষ করা যায়। তিনি জ্ঞাত আয় বহির্ভুত টাকায় টাঙ্গাইল শহরের অভিজাত এলাকা সাবালিয়ায় বিলাসবহুল বাসা, বিলঘারিন্দায় কয়েকটি ফ্ল্যাট বুকিং এবং হাজরাঘাট এলাকায় জমি কিনেছেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে নিশ্চিত করেছে, সরজমিন তদন্ত করা হলে সরোয়ার আলমের অনিয়ম-দুর্নীতির অনেক প্রমাণ পাওয়া যাব। তাছাড়া তার মোবাইলে ব্যাংকিং বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউণ্টে পর্যালোচনা করলে এসটিএলএস নামক অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে শ’ শ’ বেকার যুবক-যুবতীদের কষ্টার্জিত টাকা নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যাবে।
টাঙ্গাইল পৌরসভার একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করে জানান, টাঙ্গাইল শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পৌরসভার সাবেক মেয়র সিরাজুল হক আলমগীরের দায়িত্বকালীন সময়ে পৌরসভার কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে আঁতাত করে একই ব্যক্তির নামে একাধিক জন্মসনদ ও জন্মসনদ সংশোধন করে দেওয়ার নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে পৌরপ্রশাসক জন্মসনদ প্রদান ও সংশোধনের সরকারি আইডি ও পাসওয়ার্ড সরোয়ার আলমের কাছ থেকে তাঁর নিজের কাছে নিয়ে নেন। এসব বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের নিমিত্তে সাংবাদিকরা তার কাছে তথ্যসমদ্ধে বক্তব্য চাইতে গেলে সরোয়ার আলম অশালিন আচরণ ও এক পর্যায়ে দুর্ব্যবহার করেন।
অভিযোগকারী মো. আলম মিয়া জানান, তারা সরোয়ার আলমের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির দাবিতে অভিযোগ করেছেন। তদন্ত করলেই সরোয়ার আলমের থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে।
তিনি আরও জানান, সরোয়ার আলম ফ্যাসিস্টদের অন্যতম সহযোগী। নানা রকমের দুর্নীতি করে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তিনি একজন প্রতারকও বটে। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা তার কাছে স্বীয় সমস্যার সমাধান চাইতে গেলে তিনি ডিসি অফিসের মাধ্যমে মামলা এবং সন্ত্রাসী হামলার ভয় দেখান।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার সিএ (নাজির কাম ক্যাশিয়ার) সরোয়ার আলমের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) ও পৌরপ্রশাসক মো. শিহাব রায়হানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
দুদকের টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম জানান, প্রধান কার্যালয়ে দেওয়া অভিযোগ প্রাথমিক বাছাইয়ের পরে তাদের কাছে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। লিখিত অভিযোগপত্রটি প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন পেলে তাদের কাছে পাঠানোর পর তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.