টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা-চরগাবসারা হয়ে ভূঞাপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে ১২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে চলমান সড়ক সংস্কার কাজে ধীরগতি ও নিম্নমানের অভিযোগ উঠেছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী ও যানবাহন চালকরা। প্রতিদিনই যানবাহন বিকলের ঘটনা ঘটছে, আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন চালকরা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, উল্লিখিত মহাসড়কে ডাবল বিটুমিনাস সারফেস ট্রিটমেন্ট (DBST) পদ্ধতিতে সংস্কার কাজ চলছে। প্রকল্প অনুযায়ী ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কাজের অগ্রগতি মাত্র ৮০ শতাংশ।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, সংস্কার শুরুর আগে পুরনো রাস্তার খানাখন্দ ও ফাটল যথাযথভাবে補修 না করেই তড়িঘড়ি করে বিটুমিন, কেরোসিন ও পাথরের সংমিশ্রণে কার্পেটিং করা হচ্ছে। এতে নতুন কাজ দীর্ঘস্থায়ী না হয়ে অল্প সময়েই দুর্বল হয়ে পড়ছে।
সড়কের বিভিন্ন অংশ সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পুরনো পাথরের ওপর নতুন পাথর ছিটিয়ে কার্পেটিং করা হচ্ছে। এতে আগের পাথর উঠে গিয়ে নতুন পাথরের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে না। চাকার ঘর্ষণে সেসব পাথর ছিটকে যাত্রীদের শরীরে আঘাত করছে এবং যানবাহনের যন্ত্রাংশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ভূঞাপুরের সিএনজি চালক জাহিদ বলেন, “সম্প্রতি পালিমা ব্রিজ এলাকায় আমার গাড়ির চাকা ফেটে যায়। বাধ্য হয়ে নতুন চাকা কিনে লাগাতে হয়েছে। সপ্তাহে অন্তত তিনবার চাকা বদলাতে হচ্ছে। এভাবে গাড়ি চালিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে উঠেছে।”
ভুক্তভোগী যাত্রীরাও অভিযোগ করে বলেন, সড়কে চলাচলের সময় গাড়িতে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি লাগে। নিয়মিত পাথর ছিটকে শরীরে লাগছে। কোনো ফিনিশিং কাজ চোখে পড়ছে না। অনেক স্থানে ভালো সড়কের ওপর অপ্রয়োজনীয়ভাবে কাজ করা হলেও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে কাজ হয়নি। স্থানীয়রা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে গর্তগুলো মেরামত করলেই চলত, অথচ পুরো সড়কে অপ্রয়োজনীয় কার্পেটিং করে কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রুমানা আক্তার বলেন, “রাস্তায় চলাচলের সময় গাড়ির ভেতরে আতঙ্কে থাকতে হয়। গায়ের ওপর পাথর এসে পড়ে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।” আরেক যাত্রী রাব্বি বলেন, “গাড়িতে এত ঝাঁকি খাই যে অসুস্থ কেউ হলে রাস্তায় প্রাণও হারাতে পারে। কাজের কোনো মান নেই, শুধু লোক দেখানো সংস্কার চলছে।”
সাব-ঠিকাদার ফারুক হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা সওজের নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়ম মেনেই কাজ করছি। অনেকেই প্রকৌশলগত দিক না জেনে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।”
সড়ক বিভাগের কার্যসহকারী রুবেল হোসেনও একই বক্তব্য দিয়ে জানান, “উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসারেই কাজ হচ্ছে। বিটুমিনাস পদ্ধতিতে এমনটা হয়ে থাকে।”
সওজের টাঙ্গাইল জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমেরি খান বলেন, “বরাদ্দ সীমিত থাকায় ডাবল বিটুমিনাস সারফেস ট্রিটমেন্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। এতে যানবাহন অতিরিক্ত গতিতে চলতে পারবে না, যা দুর্ঘটনা রোধে সহায়ক।”
তবে সংশ্লিষ্টদের এ বক্তব্যে সন্তুষ্ট নন স্থানীয়রা। তাদের প্রশ্ন, “যেখানে কাজের মান নিয়ে জনমনে এত প্রশ্ন, সেখানে নিরীক্ষা ও জবাবদিহির ব্যবস্থাই বা কোথায়?”
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.