
জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: টাঙ্গাইল শহরের এনায়েতপুরস্থ হযরত ফাতেমা (রা.) মাদ্রাসার হিফজ শাখার এক শিশু শিক্ষার্থীকে (১০) যৌন নিগ্রহের অভিযোগে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক ওবায়দুল্লাহ (২৫) ও পরিচালক মোহাম্মদুল্লাহকে (৩৫) পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার (৬ আগস্ট) বিকালে শহরের এনায়েতপুর (বৈল্যা) থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা যায়, শহরের এনায়েতপুর (বৈল্যা) পালপাড়ার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদুল্লাহ ধুলেরচর মাদ্রাসার পাশে হযরত ফাতেমা (রা.) মহিলা মাদ্রাসা নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করে পরিচালক হিসেবে চালাছিল। পরে তার ছোট ভাই ওবায়দুল্লাহকে ওই মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে তিনি নানা অজুহাতে কামলমতি শিক্ষার্থীদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়া, অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়া ইত্যাদি অপকর্ম করেছেন। গত ২৭ জুলাই আবাসিক থেকে মাদ্রাসার হিফজ শ্রেণির এক ছাত্রীকে নির্জন কক্ষে ডেকে নিয়ে ‘জিনের’ ভয় দেখিয়ে চোখ বেঁধে পড়নের কাপড় খুলে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ সহ যৌন নিগ্রহের চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে ওই শিশু শিক্ষার্থী পালিয়ে কক্ষ থেকে দৌঁড়ে বেড়িয়ে গিয়ে সম্ভ্রম রক্ষা করে। পরে ওই শিক্ষার্থী বাড়িতে গিয়ে তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। তার মা স্থানীয় মাতবরদের সঙ্গে পরামর্শ করে মাদ্রাসার পরিচালক মোহাম্মদুল্লার কাছে বিচার চান। পরিচালক মাদ্রাসার ওই শিক্ষক তার ভাই হওয়ায় এবং প্রতিষ্ঠানের সুনাম রক্ষায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ায় স্থানীয় লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার (৬ আগস্ট) মাদ্রাসার পরিচালকের কাছে গিয়ে ঘটনার বিষয়ে জানতে চায়। এ সময় পরিচালক মোহাম্মদুল্লাহ তার ভাই ওবায়দুল্লাহকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়ে বলেন, শিক্ষক ওবায়দুল্লাহ পালিয়ে গেছে, সে যদি অপরাধী হয় থাকে আইন তাকে শাস্তি দিবে- আপনারা থানায় যান। এ নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে মোহাম্মদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে। পরে ওই শিশুশিক্ষার্থীর মা বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা (নং-৮, তাং-৬/৮/২০২৫ইং) দায়ের করেন। মামলা দায়ের করার পর এদিন বিকালে পুলিশ মাদ্রাসার শিক্ষক ওবায়দুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে।
এলাকাবাসী জানায়, হযরত ফাতেমা (রা.) মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষক ওবায়দুল্লাহ মাদ্রাসার ওয়াশরুমে ক্যামেরা লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের নগ্ন ভিডিও ধারণ করে ‘জিনের’ ভয় দেখিয়ে অনৈতিক অপকর্ম করে। ইতোপূর্বে ১০-১২ জন শিক্ষার্থীকে তিনি শিকার বানিয়েছেন। মাদ্রাসার পরিচালকের কাছে অভিযোগ করা হলে মোহাম্মদুল্লাহ সব ক্ষেত্রেই ঘটনা ধামাচাপা দেন। হিফজ শ্রেণির শিক্ষার্থীর ঘটনাটিও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। শিক্ষার্থীর বুদ্ধিমত্তা ও অভিভাকদের সচেতনতায় পারেন নি। এলাকাবাসী শিক্ষা প্রতিষ্ঠনটির পরিচালক ও তার লম্পট ভাইয়ের দষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
যৌন নিগ্রহের শিকার শিশু শিক্ষার্থীর মা ও মামলার বাদী জানান, লম্পট শিক্ষক ওবায়দুল্লাহ ইতোপূর্বেও এ ধরণের কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছে। কোনটিরই বিচার হয়নি। শাস্তি না হওয়ায় সাহসী হয়ে তার শিশুকন্যাকে তার লালসার শিকার বানিয়েছে। তিনি অভিযুক্তদের দষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তানবীর আহাম্মেদ সাংবাদিকদের জানান, মাদ্রাসার এক শিশু শিক্ষার্থীকে যৌন নিগ্রহ করার চেষ্টার অভিযোগে তার মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় মাদ্রাসার পরিচালক মোহাম্মদুল্লাহ ও তার ভাই ওবায়দুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।