টাঙ্গাইলে রেললাইনের ক্রসিং গুলোতে বাড়ছে মত্যুর মিছিল 

জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: টাঙ্গাইলের যমুনা নদী সংলগ্ন ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশন থেকে জেলার মির্জাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত ৪৬টি রেলক্রসিংয়ের মধ্যে ৩০টি অরক্ষিত ক্রসিং মৃত্যুফাঁদে পরিনত হয়েছে। এসব অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলোতে গেটম্যান না থাকায় আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলের যমুনা নদী সংলগ্ন কালিহাতী উপজেলার ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশন থেকে সদর উপজেলার ঘারিন্দা রেলস্টেশন পর্যন্ত ১৯টি রেলক্রসিং রয়েছে। এরমধ্যে ৬টি রক্ষিত অর্থাৎ গেটম্যান রয়েছে এবং ১৩টি অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে কোন গেটম্যান নেই। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঘারিন্দা রেলস্টেশন থেকে মির্জাপুরের মহড়া রেলস্টেশন পর্যন্ত ১৮টি রেলক্রসিংয়ের মধ্যে ৬টিতে গেটম্যান রয়েছে অর্থাৎ রক্ষিত এবং ১২টি অরক্ষিত ক্রসিংয়ে গেটম্যান নেই। মহেড়া রেলস্টেশন থেকে মির্জাপুর উপজেলা রেলস্টেশন পর্যন্ত ৯টি রেলক্রসিংয়ের মধ্যে ৪টি রক্ষিত এবং ৫টি অরক্ষিত। ইব্রাহিমাবাদ থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলোতে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দিন দিন বাড়ছে। প্রায়ই হতাহতের ঘটনায় চলাচলকারীরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

রেল পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অদ্যাবধি টাঙ্গাইলের ইব্রাহিমাবাদ থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে জানুয়ারি মাসে ২জন, ফেব্রুয়ারিতে ২জন, মার্চ মাসে ১জন, এপ্রিল মাসে ১জন, মে মাসে ২জন, জুন মাসে ৪জন এবং ২৫ জুলাই পর্যন্ত ৩জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে অনকেই অরক্ষিত রেলক্রসিং পারাপার এবং রেললাইনে অসাবধানতায় চলাচলের কারণে মত্যু হয়। এছাড়া ২০২৪ সালে ২ ফেব্রুয়ারিতে জেলার কালিহাতীর আনালিয়াবাড়ি এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে বাবা-ছেলেসহ তিনজনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনাটি দেশে আলোড়ন তুলে। এ নিয়ে ওই বছরের ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩ জন। ২০২৩ সালে টাঙ্গাইল জেলায় ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যান ৪০ জন।

সরজমিন দেখা যায়, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার-বাসাইল সড়কে টেঙ্গুরিয়াপাড়ায় অরক্ষিত রেলগেট রয়েছে। ওই রেলগেটের দুইপ্রান্ত বড় এবং মোটা আকার দুটি স্পীডব্রেকার (গতিনিয়ন্ত্রক) রয়েছে। গেটের দুইপ্রান্তে স্থানীয়দের বসতভিটা এবং গাছের লতাপাতায় সড়কটি প্রায় ঢেকে গেছে। লতাপাতার কারণে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের ট্রেন এলে বোঝার কোনা উপায় নেই। এছাড়া অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের পাশেই ছোট্ট একটি দোকান রয়েছে।

রেলক্রসিংয়ের পাশের দোকানদার আব্দুল ওয়ারেছ মিয়া জানান, প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার যানবাহন এই রেলক্রসিং পাড় হয়ে সড়কে চলাচল করে থাকে। এছাড়া রেলক্রসিংয়ের দুই প্রান্তর ৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয়রা পারাপার হয়ে থাকে। তিনি ওই রেলক্রসিংয়ের পাশে প্রায় ৫ বছর ধরে দোকান করছেন। প্রায় সময়ই দোকান ফেলে জনস্বার্থে রেলক্রসিংয়ে গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

তিনি জানান, ট্রেন যখন কাছাকাছি চলে আসে তখনও ট্রেনের শব্দ শোনা যায়না। সে সময় সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের শব্দ এবং ট্রেনের শব্দ এক হয়ে যায়। ফলে চলাচলকারী যানবাহনের চালকরা ট্রেন আসার শব্দ শুনতে পায়না। সে সময় দৌঁড়ে গিয়ে তিনি বিনামূল্য জনস্বার্থে গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

টেঙ্গুরিয়াপাড়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মেহেদী হাসান জানান, টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার টেঙ্গুরিয়াপাড়ার বিশাল এলাকাজুরে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে হাবলা-টেঙ্গুরিয়াপাড়া ফাজিল মাদ্রাসা, টঙ্গুরিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আব্দুল্লাহল কাফি আল কোরাইশি দারুল হাদিস একাডেমি, আব্দুল হাই হাফিজিয়া মাদ্রাসা, আব্দুল্লাহল বাকি উচ্চ বিদ্যালয়, হাবলা ছালাফিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসা অন্যতম। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবক ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের কারণে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক এবং শিক্ষকরা আতঙ্কিত থাকেন।

নাটিয়াপাড়ার মিনহাজ উদ্দিন জানান, দেলদুয়ার-বাসাইল সড়ক বাসাইল, সখীপুর, টাঙ্গাইল সদর, দেলদুয়ার এবং মির্জাপুর উপজেলার লাখো মানুষ প্রতিনিয়ত চলাচল করে থাকে। অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের দুইপ্রান্তে দুটি স্পীডব্রেকার থাকায় যানবাহনের গতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকে।

রেল লাইনের কর্মচারী রুবেল মিয়া জানান, বাসাইলের হাবলা ইউনিয়নের টেঙ্গুরিয়াপাড়া থেকে ৬ কিলোমিটার এলাকার জুরে তিনি রেললাইনের দেখভাল করে থাকেন। তার দায়িত্বে থাকা ছয় কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অরক্ষিত রেলক্রসিং রয়েছে। যেগুলো বাসাইলের টেঙ্গুরিয়াপাড়া, পাটখাকুরি ও সোনালিয়ায় অবস্তি।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া রেলস্টেশনের সহকারী মাস্টার রকিবুল হাসান জানান, টাঙ্গাইলের ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশন থেকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত ৩০টি অরক্ষিত রেলক্রসিং রয়েছে। এ রেললাইন দ্রুতই ডাবল লাইনের কাজ হবে বলে আশা করছেন। ডাবল লাইনের কাজ হলে দ্রুত এসব অরক্ষিত রেলক্রসিং সবই রক্ষিত হয়ে যাবে।

টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা রেলস্টেশনরর সহকারী স্টেশন মাষ্টার মো. তহিদুর রহমান জানান, ইব্রাহিমাবাদ থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত যেসব অরক্ষিত রেলক্রসিং রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে দ্রুতই রেল কর্তৃপক্ষ কাজ করবে।

তিনি আরো জানান, রেললাইন উন্নয়ন কাজ চলছে। এই রেললাইন দ্রুতই ডাবল লাইনের কাজ শুরু হবে। তখন আপনা আপনি এ সমস্ত রেলক্রসিং রক্ষিত হয়ে যাবে।

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

ভারতকে ‘অসহযোগী’ দেশ ঘোষণা করল যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতকেও ‘অসহযোগী’ দেশগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা (আইসিই)। এটি এমন একটি তালিকা, যেখানে উল্লেখিত দেশগুলো প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ায় যথাযথ

এবার মিলল ছাত্রলীগের আয়নাঘরের সন্ধান

নিজস্ব প্রতিবেদক: এবার ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের ‘আয়নাঘর’ এর সন্ধান মিলেছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে। এ আয়না ঘরটি জেলা শহরের লেকার্স পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ সড়কের আলম ডক ইয়ার্ড

সুপারি গাছের খোল খুঁজতে বাগানে যান গৃহবধূ, এরপর যা ঘটল

নিজস্ব প্রতিবেদক: লক্ষ্মীপুরে মিনোয়ারা মিনু বেগম (৪৬) নামের এক নারীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাত ৯ টার দিকে সদর উপজেলার দক্ষিণ

‘চার্জারভ্যানে বাসের চাপায় চারজনের প্রাণহানি’

নিজস্ব প্রতিবেদক: দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীবাহী একটি চার্জারভ্যানে বিআরটিসি বাসের চাপায় ৪ জন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টার দিকে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের রানীরবন্দর

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ৬০ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ।

আমিনুল হক,শাহজাদপুর প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ২০১৫ সালের ৮ মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবিগুরুর নামে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল ১০৫

তাড়াশ উপজেলা আদিবাসী ফোরামের নেতৃবৃন্দ ইউএনও সুইচিং মং মারমাকে ফুলেল শুভেচ্ছা

লুৎফর রহমান তাড়াশ: তাড়াশ উপজেলা আদিবাসী ফোরামের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুইচিং মং মারমার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ও উনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।