
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে বিপুল অর্থ পাচারের গুরুতর অভিযোগে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, করোনাকালে চিকিৎসা খাতের নানা অনিয়ম ও লুটপাটের মধ্য দিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন শত শত কোটি টাকার অবৈধ সাম্রাজ্য।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, জাহিদ মালেক জ্ঞাত আয়ের বাইরে ৬১ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন এবং ৩৪টি ব্যাংক হিসাবে ১৪৩ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। তাঁর ছেলে রাহাত মালেকের নামে রয়েছে ১১ কোটি টাকার অপ্রকাশিত সম্পদ এবং ৫১টি ব্যাংক হিসাবে ৬৬৩ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য মিলেছে। দুদকের ধারণা, মালেক পরিবার বিদেশে পাচার করেছেন অন্তত এক হাজার কোটি টাকা।
এছাড়া, জাহিদ মালেক, তাঁর ছেলে রাহাত ও মেয়ে সিনথিয়া মালেকের নামে দেশে কেনা হয়েছে মোট ছয় হাজার ৫৩ শতাংশ জমি—যার বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাকালে প্রতিরক্ষামূলক সামগ্রীর দাম বেড়েছে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত। অনিয়মের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় ও নিম্নমানের স্থাপনায় ব্যয় হয়েছে শত কোটি টাকা। কমিশনের মতে, এসব অনিয়মের মূল কেন্দ্রে ছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
কেন্দ্রীয়ভাবে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতেন রাহাত মালেক শুভ্র ও ডা. মাজহারুল হক তপনের নেতৃত্বাধীন চক্র। জানা গেছে, কোনো প্রতিষ্ঠান কাজ পেতে হলে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ‘কমিশন’ দিতে হতো। এমনকি কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোও ভুয়া নামে ঠিকাদারি অব্যাহত রেখেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “শুভ্র-তপন চক্রকে কমিশন না দিলে কোনো কাজ পাওয়া যেত না। দুর্নীতিতে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সুযোগ দেওয়া হতো।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ সীমিত হলেও সুশাসনের অভাব ও দুর্নীতির কারণে প্রান্তিক জনগণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইসিডিডিআরবি-র বিজ্ঞানী আহমদ এহসানুর রহমান বলেন, “বিনামূল্যে যে সেবা পাওয়ার কথা ছিল, তা জনগণকে পকেট থেকে খরচ করে নিতে হয়েছে।”
দুদক জানিয়েছে, সব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।