দেশের প্রয়োজনে, দেশের ক্রান্তিকালে একটি বিপ্লব ঘটে। যাকে বলে বেঁচে থাকার যুদ্ধ, বাঁচিয়ে দেওয়ার যুদ্ধ। তেমনি একটি বিপ্লবের নাম ২৪'র জুলাই বিপ্লব কিংবা জুলাই অভ্যুর্থান। স্বাধিনতার চুয়ান্ন বছরে এসেও এ জাতী নতুন করে বাঁচতে আরেকটি বিপ্লবের প্রয়োজন মনে করেছে। যে বিপ্লবে স্বৈরচার বিরোধী সবদল, সবমত, সব বয়সের মানুষের স্বতঃস্ফুর্ততা ছিল। দুই সহস্রাধিক জীবনের সলীল সমাধির মধ্য দিয়ে একটি ফ্যাসিস্টের বিদায় হলো। বিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশে তারুণ্যের বিপ্লব। বেঁচে থাকার যুদ্ধে বাঙ্গালী আপোষহীনতার পরিচয় দিয়েছে ৭১'র পরবর্তী ২৪'র জুলাই বিপ্লবে। এ জুলাই এনে দিয়েছে রাজবন্ধির রাজকীয় মুক্তি। হারানো সম্মান পুনঃপ্রাপ্তি। কথা বলার স্বাধিনতা। অভাব, অভিযোগ নিয়ে সীমাহীন আন্দোলনের সুযোগ। গৃহবন্ধির মুক্ত বিহঙ্গের মতো বিচরণ।
২৪'র জুলাই অভ্যুর্থান গায়ের মেটোপথে ভয়ে ভয়ে চলাফেরা করা লোকদের শহর-গঞ্জে দাফিয়ে বেড়ানোর স্বাধিনতা এনে দিয়েছে। মৃত্যুরপথ থেকে নতুন জীবন নিয়ে ফেরার অসংখ্য গল্পের উপখ্যান এ জুলাই বিপ্লব। সভ্যতার যুগে পৃথিবীর নারকীয় মানবতা বিরোধী লৌহমর্ষক চিত্র 'আয়নাঘর'র সন্ধান দিয়েছে এ জুলাই বিপ্লব। মুমূর্ষূ একটি দেশের হাল ধরার মতো অলৌকিকভাবে বিশ্বব্যক্তিত্ব ডক্টর ইউনূসের আবির্ভাব ঘটিছে এ বিপ্লব। বিশ্ব দরবারে নতুন করে বাংলাদেশের আলাদা পরিচিতি পেয়েছে। প্রতিবেশী স্বার্থপর, চরম স্বার্থপর দেশ 'ভারত' ছাড়া নিজেদের স্বনির্ভরতা এনে দিয়েছে। প্রতিবেশী শত্রুকে চোখে চোখ রেখে কথা বলার দুঃসাহস দেখিয়েছে জুলাই বিপ্লব।
স্যার, 'একটা মরে তো আরেকটা সামনে চলে আসে' এমন একটা সিচুয়েশনের নাম জুলাই অভ্যুর্থান। বিশ্ব দেখেছে 'তারুণ্যের বাংলাদেশ'! বাংলাদেশ ৭১'এনেছে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ 'জুলাই' এনেছে অজস্র জীবনের বিনিময়ে। বাংলাদেশ বাঁচতে শিখেছে, মরতেও বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ তার প্রয়োজনে আর থামবে না। দমিয়েও রাখা যাবে না। এদেশের তারুণ্যে দেশপ্রেম জেগেছে। জীবনের চেয়ে দেশ এবং দেশের স্বাধিনতাকে গুরুত্ব দিতে শিখেছে।
পৃথিবীর ঘটনাবহুল ঘটনাগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ছাত্রজনতার গণ অভ্যুর্থান 'জুলাই বিপ্লব' একটি। বন্দুকের নলকে উপেক্ষা করে জীবনের মায়াকে তুচ্ছ করে বুক টানটান করে মরতে মরিয়া প্রজন্মকে দেখেছে বিশ্ব। দেশের ইতিহাসে প্রথম 'রাষ্ট্রপ্রধানসহ একটি সাজানো, গোছানো মন্ত্রিপরিষদ' পালিয়েছে। বিশ্ব স্বাক্ষি একজন জাতীয় মসজিদের ইমামও পালিয়েছে। কী পরিমাণ অত্যাচার করলে, কী পরিমাণ ফ্যাসিস্ট হলে এমন পরিণতির শিকার হতে হয়। এ বিপ্লবে স্থানীয় অসংখ্য জনপ্রতিনিধি পালিয়েছে। পালিয়ে বেড়াচ্ছে জনপদের মানুষকে কষ্ট দেওয়া অসংখ্য মানব সন্তান। কারণ, ক্ষমতার অপব্যবহার। পেশিশক্তির অপব্যবহার।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তির পালিয়ে যাওয়ার, প্রাণে বাঁচার গল্প শুনে কৌতুকের মতো বিনোদন নিচ্ছে। কেউ কলাপাতার বিছানায় জঙ্গলে শুঁয়ে পড়েছে, কেউ কচুরি ফণায় লুকিয়ে সীমান্ত পার, কেউ জনগণের গণধোলাইয়ের শিকার, কেউ সমুদ্র বিলাসে খোলস পাল্টানো সুরুতে ধরা। কি একটা অবস্থা। এসব কিছুর মূলেই জুলাই অভ্যুর্থান! 'জুলাই' বারবার আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, কোনো 'অত্যাচার, জুলম, অবিচার, অনাচার' স্থায়ী হয় না। কারো স্বাধিনতায় হস্তক্ষেপ, কারো প্রতি অতিমাত্রায় জুলমের পরিণতি খুব ভালো হয় না। এদেশের প্রয়োজনে বারবার 'একাত্তর, জুলাই' ফিরে আসবে। হয়তো নতুন নামে, নতুন করে।
নতুন বাংলাদেশ। নতুন আঙ্গিকে গড়ে উঠুক। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে নমনীয় হোক দেশের সকল ফ্যাসিস্ট বলয়। এদেশ ভালো থাকলে এদেশের আঠারো কোটি মানুষ ভালো থাকে। এদেশের স্বাধিনতা, স্বার্ভভৌমত্ব টিকিয়ে রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব। সুন্দর একটি স্বদেশের প্রত্যাশা সকলের অন্তরে লালিত হোক। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ইতিহাসের প্রতি সম্মান জানাই। জুলাই অভ্যুর্থানে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন হোক জুলাইকে দেশের এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে ধারণ করা।
লেখক-
শিব্বির আহমদ রানা
(সমাজ ও গণমাধ্যমকর্মী)
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.