নিজস্ব প্রতিবেদক: জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরীর বিতর্কিত বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশের নির্বাচন ও প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক ডা.জাহেদ উর রহমান মনে করেন, শাহজাহান চৌধুরীর মন্তব্য কোনো তাৎক্ষণিক ভুল নয়; এটি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পুলিশ–প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে জামায়াতের পক্ষে সুবিধা আদায়ের ইঙ্গিত দেয়।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) ডা. জাহেদ তার ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন।
জাহেদ উর রহমান বলেন, শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যের মাধ্যমে দাবি করেন — প্রশাসন তার দলের নির্দেশে “উঠবে–বসবে, মামলা দেবে, গ্রেফতার করবে”—এটি শুধু রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর নয়, বরং সরাসরি প্রশাসনকে দলীয় কাজে ব্যবহারের ঘোষণা। তার ভাষ্য, এটি এমন এক বার্তা, যা বলে দেয়,জামায়াত প্রশাসনকে তাদের কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।
জামায়াতের ভেতরের কিছু অংশ দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনে নিজেদের সমর্থক বা সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছে। যদিও এসব আলোচনা আগে অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে ছিল, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী এগুলোর বাস্তবতার দিকটি আরও উন্মোচিত করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরও জানান, বাংলাদেশের পুলিশ–প্রশাসনে তিন ধরনের রাজনৈতিক আনুগত্য সাধারণত দেখা যায়—আওয়ামী লীগ পন্থী, বিএনপি–পন্থী এবং জামায়াতপন্থী। এসব আনুগত্য নির্বাচনের সময় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
তার মতে, যদি মাঠ প্রশাসনে জামায়াতপন্থী অংশ সক্রিয় হয় এবং তাতে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত অংশ কৌশলগত কারণে সমর্থন যোগ করে, তাহলে নির্বাচনের ফলাফল বড়ভাবে প্রভাবিত হতে পারে।
তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি তিনটি রাজনৈতিক দল বিএনপি,জামায়াত ও এনসিপি সরকারের কাছে তাদের অপছন্দের কিছু উপদেষ্টার তালিকা দিয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই তালিকাগুলোর মধ্যেও প্রশাসন ও পুলিশের ওপর প্রভাব বিস্তারের স্পষ্ট চেষ্টা দেখা গেছে।,
জাহেদের মতে, যদি বিএনপি এমন একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যিনি নাকি জামায়াতপন্থী প্রভাব বিস্তার করছেন, তাহলে বুঝতে হবে প্রশাসনের ভেতরে চলমান টানাপোড়েন বাস্তব।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ইতোমধ্যেই শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যের নিন্দা জানালেও নির্বাচন কমিশন এখনো প্রতিক্রিয়া জানায় নি। যদিও কমিশনের আইনি ক্ষমতা তফসিল ঘোষণার আগে সীমিত, তবু একটি নরম সতর্কতা বা উদ্বেগ প্রকাশ করা প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।
কারণ এই ধরনের মন্তব্য ভোটারদের মনে সরাসরি সন্দেহ সৃষ্টি করে,নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না।
জাহেদ উর রহমান আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দেশের বেশিরভাগ ডিসি,এসপি এবং ইউএনও গত এক যুগে শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় প্রশাসনে আওয়ামী লীগ–ঝোঁক একটি বাস্তবতা। তবে যদি আওয়ামী লীগের কৌশলগত স্বার্থ জামায়াতের সঙ্গে কোনো পর্যায়ে মিলিত হয়। বিশেষ করে বিএনপিকে দুর্বল রাখার উদ্দেশ্যে, তাহলে প্রশাসনের দুই পক্ষই একই লাইনে চলে আসতে পারে। এতে নির্বাচনী মাঠ পুরোপুরি একপক্ষের হাতে চলে যেতে পারে।
তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত মত’ হিসেবে দেখলে বড় ভুল হবে। এটি ক্ষমতায় ফেরার কৌশল, যার কেন্দ্রে আছে পুলিশ–প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ। সরকারকে অবশ্যই যাচাই করতে হবে। কোথায় কোথায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলছে।
জাহেদ উর রহমান সতর্ক করেন, যদি নির্বাচন প্রভাবিত হয়,যে পক্ষ থেকেই হোক। তার পরিণতি দেশের গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার জন্য ভয়াবহ হবে।,
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.