জামায়াতের প্রার্থী চূড়ান্ত, বিএনপিতে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে সক্রিয়

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির মাঠে এখন থেকেই সরব দেখা যাচ্ছে। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ভোটের মাঠে লড়াই করতে চায় বিএনপি। জামায়াত তাদের দাওয়াতি কাজের পাশাপাশি ভোটারদের কাছে ভোট চাইছে। ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে একক প্রার্থী হিসেবে অধ্যাপক মো. মাজেদুর রহমানকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি গাইবান্ধা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।

অধ্যাপক মাজেদুর রহমান ইতোমধ্যে নিয়মিত হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ নিয়েই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভোট চাচ্ছেন। প্রতিদিনের গণসংযোগে তাঁর অবস্থান আরও শক্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. বাবুল আহমেদ, সদস্য সচিব মো. মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিক, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ খন্দকার মো. জিয়াউল ইসলাম জিয়া, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও পৌরসভার প্রশাসক প্রয়াত আজিজার রহমান সরদারের ছেলে বিশিষ্ট সমাজসেবক মো. আরেফিন আজিজ সরদার সিন্টু, গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম জিন্নাহ ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাখাওয়াৎ হোসেন মিলন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা এখন মাঠে সক্রিয়ভাবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. বাবুল আহমেদ ও সদস্য সচিব মো. মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিক বিভিন্ন এলাকায় পথসভা ও মতবিনিময় করছেন। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর এখনো পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. জিয়াউল ইসলাম জিয়া বিএনপির আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে সক্রিয়। তবে বর্তমানে তাঁর মাঠমুখী তৎপরতা কিছুটা কমেছে। যদিও তৃণমূলে অনেকেই তাঁকে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে দেখছেন।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও পৌরসভার প্রথম প্রশাসক প্রয়াত আজিজার রহমান সরদারের ছেলে আরেফিন আজিজ সরদার সিন্টুও মাঠে রয়েছেন। একজন উদীয়মান তরুণ সমাজসেবক হিসেবে তিনি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তরুণ ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করছেন।

এছাড়াও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাখাওয়াৎ হোসেন মিলন নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁকে বিএনপির একজন ‘কলমযোদ্ধা’ হিসেবেও মূল্যায়ন করছেন অনেকে। তাঁর পক্ষেও তৃণমূল পর্যায়ে মনোনয়নের দাবি জোরালো।

বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, জামায়াত যেখানে একক প্রার্থী নিয়েই নির্ভারভাবে মাঠে আছে, সেখানে বিএনপিতে এখনো সমন্বয়হীনতা ও অভ্যন্তরীণ বিভক্তি কাটেনি। সবমিলিয়ে বিএনপির মধ্যে ঐক্য না এলে এবং সময়মতো প্রার্থী নির্ধারণ না হলে এ আসনে জামায়াতই মাঠের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।

উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, ‘আমি এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। ফ্যাসিস্ট শাসনের সময় বারবার মামলার শিকার হয়েছি, জেলও খেটেছি। দুর্দিনে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম সবসময়। দল মনোনয়ন দিলে তাদের মূল্যায়নের সুযোগ পাবো।’

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাখাওয়াৎ হোসেন মিলন বলেন, ‘আমি বিএনপির একজন কলমযোদ্ধা হিসেবে মাঠে আছি। দলীয় আদর্শ নিয়েই গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। তৃণমূলের আস্থা ও ভালোবাসা নিয়েই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’

বিএনপির আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী আরেফিন আজিজ সরদার সিন্টু বলেন, ‘সুন্দরগঞ্জ উপজেলাকে একটি আধুনিক, স্মার্ট ও বাসযোগ্য জনপদে রূপান্তর করাই আমার লক্ষ্য। রাজনীতি আমার কাছে দায়িত্ব ও জনগণের সেবা। আমি বিএনপির হয়ে নির্বাচন করতে প্রস্তুত, তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই কাজ করব ইনশাআল্লাহ।’

গাইবান্ধা জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ বলেন, ‘দল আমাকে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে। এর আগেও এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। কিন্তু তখন জনগণ আমাকে ভোট দিতে পারেনি, দিনের ভোট রাতেই হয়ে গিয়েছিল। সেই হতাশা আমি এখনো ভোটারদের চোখে-মুখে দেখতে পাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি এই উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলাম। আমার প্রতি এবং জামায়াতের প্রতি এখানকার মানুষের ভালোবাসা ও আস্থা রয়েছে। সারাদেশে সুন্দরগঞ্জ জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত। যদি নির্বাচিত হই, তবে এই এলাকার মানুষের খাদেম হিসেবেই কাজ করে যেতে চাই।’

উল্লেখ্য, গাইবান্ধা-১ আসনটি তিস্তা নদী বেষ্টিত সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এতে একটি পৌরসভা ও পনেরটি ইউনিয়ন রয়েছে। আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৪ হাজার ৪৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪ হাজার ৪৭১ জন, নারী ২ লাখ ৯ হাজার ৫৭৫ জন এবং হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৩ জন। এবার নতুন করে ভোটার হয়েছেন ১৯ হাজার ৫৫৬ জন।

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

বেলকুচিতে মার্কেট দখলের চেষ্টা মার্কেট অন্যের, ভাড়া আদায়ে চাপ দিচ্ছে বিএনপি নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে চালা আব্দুল হাই সুপার মার্কেটে নিজের সত্ব না থাকা সত্ত্বেও জমির মালিকানা দাবি করে দোকানের ভাড়া আদায়ে দোকানীদের চাপ দেয়ার অভিযোগ

বর্শা নিক্ষেপে দেশ সেরা বেলকুচির মেয়ে তারিন

জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: সিরাজগঞ্জের বেলকুচির মেয়ে তারিন খাতুন ৫৩ তম শীতকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বর্শা নিক্ষেপে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। তারিন জেলার বেলকুচি

হবিগঞ্জে ট্রাকচাপায় যুবক নিহত, আহত ২

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জ শহরতলীর রিচি এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেলে ট্রাকচাপায় বিশাল মিয়া (২২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। রোববার (২

কেউ না থাকার সুযোগে বাঁশখালীতে প্রবাসীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি

বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়নে ২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার পশ্চিম চাম্বল জলেয়া বাপের বাড়ীর এক প্রবাসীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। চোরের

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় জোড়া খুন, চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ড

জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় জোড়া খুনের মামলায় চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও আটজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চারজনকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড

তাড়াশে গৃহকর্তার হাত-পা বেঁধে দুর্ধর্ষ ডাকাতি 

লুৎফর রহমান তাড়াশ: সিরাজগঞ্জে তাড়াশের বাঁশবাড়িয়া দক্ষিন পাড়ায় গৃহকর্তা সেলিনা পারভিন ও তার স্কুল শিক্ষিকা মেয়ের হাত-পা বেঁধে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার