জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক নিয়ে আপিল শুনানির তালিকায় রয়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট: রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল (আংশিক শ্রুত) শুনানির জন্য আপিল বিভাগের মঙ্গলবারের (১৩ মে) কার্যতালিকায় রয়েছে। এই আপিলের সঙ্গে প্রতীক বরাদ্দ বিষয়ে দলটির একটি আবেদনও তালিকায় রয়েছে।

সোমবার (১২ মে) বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের মঙ্গলবারের (১৩ মে) কার্যতালিকায় জামায়াতে ইসলামীর ২০১৩ সালে করা আপিলটি শুনানির জন্য ২ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে। সঙ্গে ২০১৩ সালে দলটির করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) এবং নির্দেশনা চেয়ে করা একটি আবেদনও রয়েছে।

এর আগে নির্দেশনা চেয়ে জামায়াতের করা ওই আবেদন সোমবার আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। দলটির করা ওই আপিলের সঙ্গে আবেদনটি মঙ্গলবার (১৩ মে) আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসবে বলে চেম্বার জজ আদালতের বিচারপতি মো. রেজাউল হক আজ সিদ্ধান্ত দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এ বিষয়ে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর করা আপিলের সঙ্গে আবেদনটি ট্যাগ (একসঙ্গে) করা হয়েছে। আবেদনটি প্রতীক বিষয়ে। আপিলের সঙ্গে প্রতীকের বিষয়েও শুনানি হবে। সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালে একটি রেজল্যুশন পাস করেছিলেন। এই রেজল্যুশন যখন পাস করা হয় তখন আপিলটি (২০১৩ সালে জামায়াতের করা) বিচারাধীন। আপিল বিচারাধীন অবস্থায় যেহেতু রেজল্যুশন পাস করা হয়, সেজন্য ওই আবেদন (প্রতীক সংক্রান্ত) দায়ের করে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। যেন একই সঙ্গে এটিও নিষ্পত্তি করা হয়।

রেজল্যুশনে কী ছিল—এমন প্রশ্নে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, দাঁড়িপাল্লা প্রতীক যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের প্রতীক, এটি যেন কাউকে বরাদ্দ না দেওয়া হয়। রেজল্যুশন (২০১৬ সালের) যুক্ত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আবেদনটি করে। দলের আগে যে প্রতীক ছিল, রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে একই সঙ্গে যেন তা দেওয়া হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

এর আগে কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা বরাদ্দ না দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

চিঠিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের উপস্থিতিতে ১২ ডিসেম্বর (২০১৬ সালের) ফুল কোর্ট সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, ‘দাঁড়িপাল্লা’ ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে একমাত্র সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহৃত হবে। অন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার না করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানানো হোক।

চিঠির শেষাংশে বলা হয়, এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভার ওই সিদ্ধান্ত অনুসারে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে বা কোনো নির্বাচনে প্রার্থীর প্রতীক হিসেবে ‘দাঁড়িপাল্লা’ বরাদ্দ প্রদান না করা এবং যদি বরাদ্দ করা হয়ে থাকে তাহলে ওই বরাদ্দ বাতিল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দলটির করা আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর খারিজ করে আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আপিলকারীর পক্ষে সেদিন কোনো আইনজীবী না থাকায় আপিল বিভাগ ওই আদেশ (ডিসমিসড ফর ডিফল্ট) দেন। পরে দেরি মার্জনা করে আপিল ও লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত চেয়ে দলটির পক্ষ থেকে পৃথক আবেদন করা হয়। শুনানি নিয়ে গত বছরের ২২ অক্টোবর আপিল বিভাগ আবেদন মঞ্জুর (রিস্টোর) করে আদেশ দেন। এরপর জামায়াতের আপিল ও লিভ টু আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। গত ৩ ডিসেম্বর শুনানি শুরু হয়। এরপর আরও কয়েক দিন শুনানি হয়।

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট করেন সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ। একই সঙ্গে আদালত এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সনদ দেন, যা ওই বছরই আপিল হিসেবে রূপান্তরিত হয়। পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে দলটি।

তবে হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে জামায়াত আবেদন করে, যা ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর চেম্বার জজ আদালত। এরপর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৪ সালের ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়।’

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

সিরাজগঞ্জে নার্সিং ডিপ্লোমাকে ডিগ্রি স্বীকৃতির দাবিতে বিক্ষোভ

নজরুল ইসলাম: কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিরাজগঞ্জে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সকে স্নাতক বা ডিগ্রির সমমান করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। শিগগিরই দাবি

বাংলাদেশ সীমান্তে বিমানঘাঁটি বানাচ্ছে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: লালমনিরহাট জেলায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের এক বিমানঘাঁটি চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, চীনের সাহায্য নিয়ে এ বিমানঘাঁটি চালু

সিলেটে পানি সঙ্গে বাড়ছে দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেট, বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা: সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে প্রবল স্রোতে জকিগঞ্জ উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে নববর্ষ উদযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ১লা বৈশাখ ১৪৩২ (১৪ এপ্রিল ২০২৫) সোমবার রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে নববর্ষ উদযাপিত হয়েছে। এই উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ

চুক্তি হওয়া টাকা থেকে ৫০০ টাকা কম দেওয়ায় ছাত্রদল নেতাদের নামে ধর্ষণ মামলা

ডেস্ক রিপোর্ট: যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি ইউনিয়নে ছাত্রদলের দুই নেতাসহ চার যুবক এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে আটক হয়েছে। তবে, এই ঘটনার পেছনে চমকপ্রদ একটি দাবি

ইসরায়েলের ওপর পূর্ণ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ স্পেনের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ‘গণহত্যা ঠেকাতে’ দখলদার ইসরায়েলের ওপর পূর্ণ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্পেন। আজ মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দেশটির সরকার এ নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন