জানমাল রক্ষায় অপরাধীদের ছাড় না দেয়ার হুঁশিয়ারি: জেলাব্যাপী পুলিশি অভিযান জোরদার

জেমস আব্দুর রহিম রানা: সম্প্রতি যশোরাঞ্চলে অব্যাহত হত্যাকান্ড, অস্ত্রের মহড়া দিয়ে হত্যাচেষ্টা, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী তৎপরতার ঘটনায় জেলাব্যাপী সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান জোরদার করেছে পুলিশ। অতিরিক্ত ফোর্স নিযুক্ত করে সিনিয়র অফিসারদের নেতৃত্বে চালানো হচ্ছে অভিযান। নয় থানার অফিসার ইনচার্জদেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে অভিযানের ব্যাপারে। পুলিশের দাবি, তারা মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য কঠোর অবস্থানে নেমেছে। এক্ষেত্রে অপরাধীদের ছাড় দেয়া হবেনা বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। চলমান অভিযানে অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পালবাড়ি এলাকায় পৌর কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন মিলন ও তার তিনজন সহযোগীকে মদ্যপ অবস্থায় মদসহ আটক করা হয়েছে দাবি করে তাদের ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে মাদক মামলায় চালান দিয়েছে পুলিশ। এর আগে আটক ষষ্টিতলার ম্যানসেলকে তিন দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। পুলিশের চলমান অভিযান ও ক্ষেত্র বিশেষে লাঠিচার্জ করার কারণে আটক আতঙ্কে রয়েছে বিভিন্ন এলকার দাগী অপরাধীরা।

চলতি বছরের গত দেড় মাসে যশোর শহর ও শহরতলীতে অব্যাহত খুন, ছিনতাই ও চুরির ঘটনা উঠে আসে জেলা আইনশৃংখলা বিষয়ক সভায়। এসময় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে যশোরের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, অস্ত্রের মহড়া ও হামলা চালিয়ে আতঙ্কিত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে অনেক সিন্ডিকেট। যশোর শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা, মিছিল ও শহরের অনেক স্পটে উপস্থিতি জানান দিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করেছে অনেক দুর্বৃত্ত। কয়েকটি এলাকায় ওই সন্ত্রাসীরা সরাসরি রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কথা প্রচার করছে। অনেক চিহ্নিত সন্ত্রাসীর দখলে একাধিক আগোয়াস্ত্র রয়েছে এমন তথ্যও রয়েছে। সেগুলো ব্যবহার করে অনেকগুলো হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে এমন অভিযুক্ত অনেক আসামি এখন প্রকাশ্যে। যশোরের বিভিন্ন স্পট এবং উপজেলা পর্যায়ের অনেক স্থানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে বিভিন্ন সময়ে।

এসব ঘটনাকে সামনে রেখে গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে যশোরের বিভিন্ন ক্রাইম পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে একাধিক টিম। চিহ্নিতদের মুলোৎপাটনে মাঠে নেমেছে জেলা গোয়েন্দা শাখা, পুলিশের বিশেষ শাখা ডিএসবিসহ থানা পুলিশের ইউনিটগুলো। যশোর পৌরসভায় ওয়ার্ডভিত্তিক অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুই ডজন স্পটে চলেছে অভিযান। এলোমেলোভাবে চলাফেরা করা অনেকের উপর লাঠিচার্জ করা হয়েছে। এমনকি ১২ ফেব্রুয়ারি তিনজন কাউন্সিলরের অফিসে পুলিশ অভিযান চালায়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিহ্নিত সস্ত্রাসীদের আটক করতে চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে ১৪ ফেব্রুয়ারি অভিযান চলে যশোরের পালবাড়ি এলাকায়। এছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারি বারান্দিপাড়া, শংকরপুর, ধর্মতলাসহ অনেকগুলো এলাকায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। অভিযানে কয়েকজন আটক হয়েছে বলেও তথ্য মিলেছে। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী, মোস্ট ওয়ান্টেড অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ আটকের টার্গেট রয়েছে। আর তালিকায় কয়েক জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক ও মিটিং মিছিলে যোগ দেয়া কতিপয় ক্যাডারও রয়েছেন।

পুলিশের সূত্র আরো জানিয়েছে, যশোর জেলার ৯টি থানার অফিসার ইনচার্জকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে অভিযান পরিচালনা করার জন্য। বিভিন্ন ফাঁড়ি ইনচার্জদেরও বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলাব্যাপী অভিযান চলছে। যেখানেই অরপরাধ সেখানেই অভিযান-আটক বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে পুলিশ।

এদিকে পুলিশ দাবি করেছে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারির অভিযানে আটক হওয়া পৌর কাউন্সিলর শেখ জাহিদ হোসেন মিলনের কাছ থেকে মদ উদ্ধার হয়েছে এবং তিনি মদ্যপ ছিলেন। এসময় তার সাথে আটক হন, পুলিশ লাইন টালিখোলার শেখ দস্তগীর হোসেন উজ্জ্বল, মারুফুজ্জামান, পুলিশ লাইন্স কদমতলার শফিকুল ইসলাম। তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। আর ১৪ ফেব্রুয়ারি মুজিব সড়কের প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র থেকে চাঁদাবাজির অভিযাগে আটক ষষ্টিতলার ম্যানসেলের ৩ দিনের রিমান্ড চেয়ে চালান দেয়া হয়েছে। তবে কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, কোনো অপরাধ না করলেও তারা পুলিশের মারপিটের শিকার হচ্ছেন । এব্যাপারে সতর্ক অভিযান চালানোর দাবিও তুলেছেন তারা।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম এন্ড অপস বেলাল হোসাইন জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলমত উপেক্ষা করে জিরো টলারেন্স স্টাইলে এগুচ্ছে পুলিশ। যশোর জেলার সব থানা এলাকার আওতাধীন সব স্পটেই অভিযান শুরু হয়েছে। পুলিশি অভিযানকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি মহল ও কিছু জনপ্রতিনিধি যে ভূমিকা পালন করছেন তা যথার্ত নয়। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সরব হওয়া কিংবা চোরাগুপ্তাভাবে থাকা, বা ঘাপটি মেরে থাকা সব অস্ত্রধারীকে আটকে অভিযান শুরু হয়েছে। তালিকায় মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী, অস্ত্র, হত্যা, ডাকাতি, দস্যুতা ঘটনায় অভিযুক্তরাও রয়েছে। এছাড়া নিষিদ্ধ কয়েকটি চরমপন্থী গ্রুপের সদস্যদের আটকেরও টার্গেট রয়েছে। চরপন্থী কানেকশন ও রাজনৈতিক শেল্টার নিয়ে থাকা অনেক উঠতি দুর্বৃত্তের দখলে আগ্নেয়াস্ত্র আছে এমন তথ্যেও অভিযান চলবে। যশোর শহর ও শহরতলীতে নিদিষ্ট অভিযোগেই অভিযান চলছে। আর অপরাধী ও নানা দোষে দুষ্ট লোকজন আটক হচ্ছে। আটকদের নামে নানা অপকান্ডের অভিযোগ ও মামলাও রয়েছে আগে থেকেই। এ অভিযান জোরদার করা হয়েছে জেলাব্যাপী।

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের সদরঘাট থানার নেভাল-২ এলাকায় মিছিলের প্রস্তুতিকালে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান

সিরাজগঞ্জে ৩,৪৭০ পিস নেশাজাতীয় বুপ্রেনরফিন ইনজেকশনসহ ২ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার ঘুরকা বেলতলা এলাকা থেকে ৩,৪৭০ পিস নেশাজাতীয় বুপ্রেনরফিন ইনজেকশনসহ ২ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ন (র‍্যাব)-১২। সেই সাথে

সিরাজগঞ্জে সিএনজি-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে মাদ্রাসা শিক্ষক নিহত

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের গঙ্গাপ্রসাদ তেলপাম্প এলাকায় বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কে সিএনজি টেম্পু ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন মাদ্রাসা শিক্ষক নিহত এবং অপর একজন

রায়গঞ্জে এইচ.জি.বি.এল রৌহা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিদায় অনুষ্ঠান 

রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে এইচ.জি.বি.এল রৌহা উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যালয় মাঠ চত্বরে প্রধান শিক্ষক আসাদুল

‘তারেকের বিরুদ্ধে চার্জশিট, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি’

ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: জিয়াউর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ ঘোষণা দেয়ার অভিযোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় সম্পূরক চার্জশিট দিয়েছে

নব গঠিত আন-নূর ফাউন্ডেশনের কমিটি পরিচিতি ও ওমরাহ হজ্জ বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠান

নিয়ত যখন খালিছ, স্বপ্ন তখন হাতের মুঠোয় শ্লোগানকে সামনে রেখে, আন-নূর ফাউন্ডেশনের কমিটি পরিচিতি ও ওমরাহ হজ্জ বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল