
নিজস্ব প্রতিবেদক: গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে জনপ্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর কাঙ্ক্ষিত সংস্কার কার্যক্রম থমকে আছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু হওয়া সংস্কার উদ্যোগগুলো মূল লক্ষ্যপূরণ না করে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বন্দি হয়ে পড়েছে।
জনগণের সেবক না হয়ে শাসকসুলভ আচরণ ও রাজনৈতিক ব্যবহারে অভিযুক্ত এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে আমূল পরিবর্তনের প্রত্যাশা থাকলেও এক বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তব অগ্রগতি নেই বললেই চলে।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, সরকারের বর্তমান অগ্রাধিকার সাংবিধানিক ও বিচার বিভাগীয় সংস্কারে; জনপ্রশাসন বা পুলিশের সংস্কার এখনো প্রাধান্য পায়নি।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১০০টির বেশি সুপারিশ জমা পড়লেও এখনো মূল কোনো প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়নি। চারটি বিভাগকে প্রাদেশিক কাঠামোয় রূপান্তর, তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন, এবং পদোন্নতিতে কোটা হ্রাসের মতো মৌলিক সুপারিশগুলো উপেক্ষিতই রয়ে গেছে।
এ বিষয়ে সাবেক সচিব ও বিপিএটিসির প্রাক্তন রেক্টর এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, কমিশনের কাজ তাড়াহুড়োর মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে, তারা গোছাতে পারেননি।
অন্যদিকে পুলিশ সংস্কার কমিশন ৩৫২ পৃষ্ঠার সুপারিশমালা জমা দেয় ১৫ জানুয়ারি। পৃথক পুলিশ কমিশন গঠন, বলপ্রয়োগের নীতিমালায় পরিবর্তন, র্যাবের কার্যকারিতা পুনর্মূল্যায়ন, এবং জনবান্ধব পুলিশিংয়ের দিকে যাত্রা করার আহ্বান জানানো হয় কমিশনের প্রতিবেদনে।
তবে সংস্কার অগ্রগতি প্রশ্নে কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন জানান, প্রস্তাব জমা দেওয়ার পর দায়িত্ব সরকারের। এদিকে পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলম দাবি করেছেন, পাঁচ ধাপে বলপ্রয়োগসহ কয়েকটি সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তবে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে কার্যকর উদ্যোগ নেই বলেও স্বীকার করেছেন তিনি।
সংস্কার বিলম্বের মূল কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ী করছেন। মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, সংস্কার কার্যক্রম দীর্ঘসূত্রতায় পড়লে জনগণ কখনোই কাঙ্ক্ষিত পুলিশি সেবা পাবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, সংস্কার প্রক্রিয়া পিছিয়ে থাকলে জনপ্রশাসন ও পুলিশ জনমুখী, জবাবদিহিমূলক ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারবে না। সেই সঙ্গে গণমানুষের আস্থা পুনরুদ্ধারও কঠিন হয়ে পড়বে।