নিজস্ব প্রতিবেদক: কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মীদের সাথে গতকাল ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে এবং এই সংঘর্ষের যারা প্রত্যক্ষদর্শী তাদের বিবরণ থেকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। বরং কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের কাছে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হয়েছে। গণমাধ্যমগুলোর একপেশে খবর বাইরে রেখে নির্মোহ ভাবে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখলে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে ছাত্রলীগই বেশি মার খেয়েছে। তাদেরকে রীতিমতো পিছু হটতে হয়েছে।
প্রায় ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগের একক নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিষ্ঠা। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে শুরু করে সর্বত্র ছাত্রলীগের কর্তৃত্ব রয়েছে। কিন্তু তারপরও ছাত্রলীগ যেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে কর্তৃত্ব গ্রহণ করতে পারলো না। কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কাছে মার খেলো এনিয়ে ব্যাপক আলাপ আলোচনা চলছে।'
ছাত্রলীগের এই নাজুক অবস্থার কারণ বিবেচনা করতে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতারাই বলছেন যে, ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রলীগের ইমেইজ এখন তলানিতে। যেকারণে এঘটনায় এখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের অবস্থানটিকে মেনে নিতে পারেনি।'
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে এখন যে ঘটনাগুলো ঘটছে তাতে হঠাৎ করেই ছাত্রলীগের এই ধরনের ভূমিকা কাম্য ছিলো না। বরং ছাত্রলীগের নেতারা যদি আগের মতো দূরত্ব বজায় রেখে সংযত অবস্থায় থাকতো এবং আস্তে আস্তে ছাত্রদের সঙ্গে এবিষয়গুলো নিয়ে আলাপ আলোচনার চেষ্টা করতো তাহলে তা ভালো হতো।
এখানে ছাত্রলীগের কৌশলগত ভুলও রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। কারণ এই ঘটনার পর যারা নারী, প্রতিবন্ধী বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আছেন তাদের কোটা সংরক্ষণের দাবিতে মাঠে নামা উচিত ছিলো। সরাসরি ছাত্রলীগের মাঠে নামাটা সাধারণ মানুষ পছন্দ করেনি। শিক্ষার্থীরাতো নয়ই। বরং এখানে যদি ছাত্রলীগ কৌশলগত ভাবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, প্রজন্ম ৭১ কিংবা প্রতিবন্ধী, নারী এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে মাঠে নামাতো এবং তারা যদি আলাদা আলাদা ভাবে অবস্থান নিতো তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রকৃত বিষয়টি অনুধাবন করা হতো।
গতকালের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে শিবির নিয়ন্ত্রিত কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা পরিকল্পিতভাবেই ছাত্রলীগের ওপর আক্রমণ করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো ছাত্রলীগকে উস্কানি দিয়ে মাঠে নামানো। যাতে পুরো ঘটনাটি অন্য দিকে মোড় নেই। এর মাধ্যমে এখন ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র শিবির এবং বিএনপির অনুপ্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে সমস্ত অভিযোগ এবং মান অভিমান রয়েছে তার প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটনাবলি একটি নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করেছে শিক্ষাঙ্গনগুলোতে। এখন দেখার বিষয় ছাত্রলীগ কিভাবে এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ায়।'
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.