শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বেড়েছে গরু, বসতঘর, অটোরিকশার ব্যাটারী ও মোটর সাইকেল চুরির ঘটনা। প্রতিদিন কোন না কোন গ্রামে হানা দিচ্ছে চোরের দল। অব্যাহত চুরির ঘটনায় বাড়ির মালিক, গরুর খামারীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত এক মাসে উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক বসতঘরে চুরির ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলার তৎফরতা না থাকার কারণে এসব চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে জানান স্থানীয় সচেতন মহল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৩ জানুয়ারী চাম্বল ইউনিয়নে ২নম্বর ওয়ার্ড এলাকার পশ্চিম চাম্বল জলেয়া বাপের বাড়ীর এক প্রবাসীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চোরের দল ঘরের জানালা ভেঙে প্রবেশ করে দুটি আলমারি থেকে দেড় ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ ৮৫ হাজার টাকা, নতুন ছয়টি কম্বলসহ দলিল-পত্র চুরি করে নিয়ে যায়। ৭ জানুয়ারী কালীপুর ইউনিয়নের জঙ্গল গুনাগরী কলেজ গেট এলাকার ইসমাইল হোসেন বাপ্পির চা-দোকান চুরি, পাশের একটি মহিলার ঘর থেকে টেলিভিশন চুরিসহ গ্রামের বিভিন্ন চুরির অভিযোগে শোয়াইব উদ্দিন ও তুষার নামের দুই যুবককে আটক করে পুলিশে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। ১৯ জানুয়ারী বাঁশখালী আদালতের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চৌধুরীর বাসায় কেউ না থাকার সুবাদে গ্রীল কেটে দরজা ভেঙে, আলমিরা তছনছ করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা মূল্যের মালামাল নিয়ে যায় চোরের দল।
খবর নিয়ে আরও জানা যায়, ২১ জানুয়ারী খানখানাবাদ রায়ছটার চৌধুরী ঘাট এলাকায় পুরাতন ব্রীজের প্রায় ৩ লক্ষ টাকা মূল্যের লোহার পাটাতন চুরি করে পুকুরিয়া চাঁদপুর বাজারের একটি ভাঙারি দোকান থেকে বিক্রি করে দেয়া ওই পাটাতন উদ্ধার পূর্বক মো. আনোয়ার কবির নামে এক ট্রাক চালককে আটক করে পুলিশ। ২৯ জানুয়ারী গভীর রাতে শীলকূপের ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার প্রবাসী হাফেজ মো. খালেদ এর বসতঘর থেকে স্বর্ণ, নগদ টাকা, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রসহ এক লক্ষাধিক টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। ৩১ জানুয়ারী ডাক্তার আসিফুল হকের কালীপুরের বাসা হতে গ্যারেজের তালা ভেঙে একটি মোটর সাইকেল চুরি করে। একই তারিখে পৌরসভাস্থ জলদীর একটি বাসা থেকে ওয়ালটন শো-রুমের মালিক মোহাম্মদ ফোরকানের ইয়ামাহা'র একটি মোটর সাইকেল চুরি হয়।
মাহমুদুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, 'গত ৩১ জানুয়ারী কালীপুরের পালেগ্রাম ৫ নম্বর ওয়ার্ডে রফিক সাওদাগরের বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে গভীর রাতে চোরের দল দরোজার তালা ভেঙে স্বর্ণ, বাড়ির প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রসহ ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়।'
পৌরসভার সাবেক মহিলা কাউন্সিলর রোজিয়া সোলতানা বলেন, 'আমরা শহরে থাকার খবর পেয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারী গভীর রাতে আমার বাড়ির প্রধান গেটের তালা ভেঙে পরে বাড়ির দরোজা ভাংচুর করে ঘরে প্রবেশ করে। নগদ ৬০ হাজার টাকা, স্বর্ণের চেইন, আংটি, আসবাবপত্র সহ প্রায় ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। একইদিনে আমার পার্শ্ববর্তী মদিনা প্রবাসী ফারুখ ও ব্যাবসায়ী আরিফের বসতঘরেও চুরির ঘটনা ঘটে।'
শীলকূপ ফাউন্ডেশনের সদস্য মাস্টার আজিজুর রহমান বলেন, 'গত ২ ফেব্রুয়ারী তারিখে টাইমবাজারস্থ আমাদের ফাউন্ডেশনের অফিসে চুরি হয়। ৫০টি আরএফএল চেয়ার, স্টিলের আলমারীসহ, অফিসের চালার ১০/১২টি টিন চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল।'
কালীপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম বলেন, 'গত জানুয়ারী মাসে আমার কালীপুরে কোকদন্ডি ও নিদান গাজীর বাড়িতে গরু চুরিসহ ৬টি চুরির ঘটনা ঘটে।'
শীলকূপ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রাশেদ নুরী বলেন, 'গত একমাসে শীলকূপে ৩টি গরু চুরির ঘটনা, ২টি বসতঘর, গাড়ীর ২টি ব্যাটারী চুরিসহ ৭টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। অনেক কে আমরা মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছি। মূলত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তৎফরতা না থাকায় এসব চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি। চুরি এখন কিছুটা কমে এসেছে।'
ছনুয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, 'আমার এলাকায় লবণ মাঠের পলিথিন চুরির ৩টি ঘটনা ঘটেছে। এগুলোকে শাস্তির আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি।'
বাঁশখালী সরকারি আলাওল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, 'আমাদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বেকার হওয়ার কারণেই তাদের দৈনন্দিন জীবন নির্বাহ করার তাগিদেই চুরি করছে। পারিবারিক সদস্যদের যথাযথ নজরদারি না থাকা, জুলাই বিপ্লবের পর স্থানীয় কিছু লোকের দৈনন্দিন চলাফেরা সীমিত হয়ে যাওয়ায় তারা নৈশকেই পছন্দ করে নিয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব না থাকা, চৌকিদারদের কর্মে অবহেলা, থানার টহল পুলিশের অপর্যাপ্ততা, স্থানীয় সমাজপতি, সুশীল সমাজের উদাসীনতাই চুরির কারণ।'
এ বিষয়ে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম প্রতিবেদক কে বলেন, 'শীতকালে চুরির ঘটনা একটু বেশী ঘটে। চুরি ঠেকাতে আমাদের পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও এলাকায় নিয়মিত টহল জোরদারসহ নজদারি বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয় ইউপির চৌকিদারদেরও এ বিষয়ে সচেতন ভূমিকা রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে কয়েকটা চুরির অভিযোগ পেয়েছি আমরা আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করেছি। গত একমাসে ২৫ থেকে ৩০ জন চোরকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছি। চোরের তালিকা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।'