
নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। সংসদ না থাকায় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে ১ জুলাই থেকে এ বাজেট কার্যকর হবে। বাজেটকে ‘চিরাচরিত ধারা’র বলে আখ্যা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, “সবাই চায় ট্যাক্স কমে যাক, আয় বাড়ুক, ব্যবসা বাড়ুক—এমন বাজেট একবারেই সম্ভব নয়। এটা বাস্তববাদী নয়।” বাজেটে আয়কর, শুল্ক ও মূল্য সংযোজন করের কিছু সংস্কার এলেও কাঙ্ক্ষিত কাঠামোগত পরিবর্তন অনুপস্থিত।
কালো টাকার সুবিধা বাতিল
প্রস্তাবিত বাজেটে অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ থাকলেও চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় তা বাতিল করা হয়। এখন আয়কর আইনের প্রচলিত ধারা অনুযায়ী বাড়তি ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয় বৈধ করার সুযোগ থাকছে।
বাজেটের প্রধান বৈশিষ্ট্য
মোট বাজেট: ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা: ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা
ঘাটতি: ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা
বৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা: ৫.৫ শতাংশ
সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দ: বাড়িয়ে ৯১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা
এডিপি বরাদ্দ: ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা
চূড়ান্ত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের ‘বিশেষ ভাতা’ বাড়িয়ে ন্যূনতম ১,৫০০ টাকা এবং পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
শুল্ক ও মূসকে ছাড়
পেট্রোলিয়াম পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানো
নারী উদ্যোক্তাদের বিউটি পার্লারে স্থাপনা ভাড়ায় মূসক অব্যাহতি
বলপয়েন্ট কলম, হার্টের রিং, চোখের লেন্সের আমদানিতে মূসক ছাড়
সোলার ইনভার্টারে আমদানি শুল্ক ১০% থেকে কমিয়ে ১%
সমালোচনা ও পরামর্শ
সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজেটে কাঠামোগত কোনো বড় পরিবর্তন হয়নি। ঈদুল আজহার ছুটির কারণে বাজেট নিয়ে পর্যাপ্ত আলোচনা হয়নি, যা হতাশাজনক।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান উৎপাদন পর্যায়ে কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ব্যবসা-বান্ধব নয় বলে মন্তব্য করেন। তবে কালো টাকা বৈধতার সুযোগ বাতিল এবং সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।
চূড়ান্ত বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ—অপ্রয়োজনীয় ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আহরণে দক্ষতা ও সামাজিক নিরাপত্তার সম্প্রসারণ। বাজেটের প্রতিটি ধারা কতটা কার্যকর হয়, তা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা ও নীতিনির্ধারকদের দায়বদ্ধতার ওপর।