নিজস্ব প্রতিবেদক: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এখনো বন্ধ্যাই রয়ে গেছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত, আন্তর্জাতিক আগ্রহের শৈথিল্য, বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টার দুর্বলতায় বছর বছর নানা উদ্যোগ নিয়েও একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। উল্টো রাখাইনে নতুন করে সংঘাত বাড়ায় বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আবারও বেড়েছে।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, রাখাইনে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘাতের কারণে প্রত্যাবাসন সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, “রাখাইনের কিছু অঞ্চল আরাকান আর্মি দখল করে নিয়েছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হলে প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব নয়। তবে সরকার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।”
জানা যায়, গত রমজানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস উখিয়ার শরণার্থী ক্যাম্পে উপস্থিত হয়ে দ্রুত প্রত্যাবাসনের ঘোষণা দেন। বাস্তবে সেটি ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। বরং পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে আরাকান আর্মি রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের জোর করে বাংলাদেশে পাঠাতে শুরু করে।
সম্প্রতি ভারত থেকেও রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। টেকনাফের লেদা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া আবুল আলী বলেন, “৯ জুন আমরা ৫০ জন ভারতের কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে বাংলাদেশে এসেছি। আমাদের ইউএনএইচসিআর কার্ড থাকলেও ভারত আমাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।”
রোহিঙ্গা নেতা মাজেদ আবদুল্লাহ জানান, রাখাইন এখন আরাকান আর্মির দখলে। রাচিডং, বুচিডং ও মংডু অঞ্চলের কয়েক লাখ রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরা কার্যত অনিশ্চিত।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চারটি বড় প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করেছেন:
১. মিয়ানমার সরকারের অনড় মনোভাব,
২. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহ হ্রাস,
৩. রাখাইনের অস্থিতিশীলতা,
৪. বাংলাদেশের কূটনৈতিক দুর্বলতা।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখ ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে, অনিবন্ধিতসহ তা ১৩ লাখের বেশি। চলতি বছরেই নতুন করে প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা সংকট আরও গভীর হচ্ছে। আশ্রয় ও খাদ্যের চাপ বাড়ছে, বাড়ছে নিরাপত্তা ও পরিবেশগত ঝুঁকি। সব মিলিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এখন এক বন্ধ গন্তব্যে আটকে আছে।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.